নামাযের পরে মুনাজাত মুস্তাহাব

ইসলামী জিন্দেগীনামায২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

চট্টগ্রাম হাটহাজারীস্থ মেখল মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম মুফতী মাওলানা ইবরাহীম খান i কর্তৃক রচিত “শরী‘আত ও প্রচলিত কুসংস্কার” নামক কিতাবের ১৩৭-১৪৯ তের পৃষ্ঠাব্যাপী এক দীর্ঘ আলোচনায় বলা হয়েছে, ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আতে সায়্যিয়াহ। কিন্তু মাসিক রাহমানী পয়গাম ’৯৬ আগষ্ট সংখ্যায় জিজ্ঞাসার জবাব কলামের দীর্ঘ আলোচনায় বলা হয়েছে এটা মুস্তাহাব। উভয় স্থানেই অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে দলীল প্রমাণসহ আলোচ্য বিষয়টির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। “উলামায়ে কিরামের মতবিরোধ রহমত স্বরূপ”- এ উক্তির আলোকে উপরোক্ত বিতর্কের উপর আমাদের কোন আপত্তি বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমাকে মাঝে মধ্যেই ইমামতির দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়। কাজেই প্রশ্ন হচ্ছেঃ

(ক) আমি কি যে কোন একটি পন্থার উপর আমল শুরু করে দিতে পারি? নাকি আমার বিবেক খাটানোর অধিকার আছে?

(খ) সম্মিলিত মুনাজাতে মুক্তাদীগণ নিজেরাও কি দু‘আর বাক্য উচ্চারণ করতে পারবে? নাকি তারা কেবল আমীনই বলতে পারবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

(ক) নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত বিদ‘আত অথবা মুস্তাহাব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ যদি কোন জায়গায় মুনাজাত করা জরুরী মনে করা হয় এবং কেউ মুনাজাত না করলে তাকে তিরষ্কার করা হয়, তখন সে পরিবেশে মুনাজাত করা বিদ‘আত হবে। কিন্তু কোন জায়গায় যদি সম্মিলিত মুনাজাত জরুরী মনে না করা হয় এবং কেউ মুনাজাতে শরীক না হলে তাকে তিরষ্কার করা হয় না, তাহলে সে পরিবেশে সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা যাবে না। বরং তা মুস্তাহাব হবে। কারণ, অনেক ইতিবাচক হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। সুতরাং অন্য কোন অসুবিধা না থাকলে সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা যায় না। কারণ, বিদ‘আত বলা হয় শরী‘আতে যার কোন ভিত্তিই নেই। অথচ ফরয নামাযের পর মুনাজাতের ব্যাপারটি তেমন নয়।

এখন যদি হযরত মাওলানা মুফতী ইবরাহীম খান সাহেব চট্টগ্রামে এ পরিস্থিতি দেখে থাকেন যে, সেখানে মুসল্লীগণ এটাকে জরুরী মনে করে, আর এই কারণে তিনি সেটাকে বিদ‘আত বলেন, তাহলে তো সেটা বিদ‘আতই হবে। কিন্তু যদি মুসল্লীগণ মুনাজাত করা জরুরী মনে করুক বা না করুক সর্বাবস্থায় এরূপ করাকে তিনি বিদ‘আত বলে থাকেন, তাহলে তাঁর এ কথা দলীলের ভিত্তিতে সহীহ নয়। তাই আপনি মুসল্লীদেরকে মাসআলাটা ভালভাবে বুঝিয়ে দিবেন এবং জরুরী মনে না করে বরাবর নামাযের পর মুনাজাত করে যেতে পারবেন। কারণ মুস্তাহাবকে জরুরী মনে করলে বিদ‘আত হয়। কিন্তু মুস্তাহাবকে জরুরী মনে না করে তা সবসময় করলেও বিদ‘আত হয় না। তবে মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। এ কথা বুঝানোর জন্য যে, মুনাজাত নামাযের অংশ নয়। বরং এটা সম্পূর্ণ আলাদা ‍জিনিস এবং এর মধ্যে ইমামের ইকতিদা নেই। সুতরাং ইমামের আগে বা পরে ইচ্ছামত মুনাজাত শেষ করতে পারে।

(খ) ইজতিমায়ী মুনাজাতে মুক্তাদীগণ উভয় কাজই করতে পারে। অর্থাৎ, ইচ্ছা করলে তারা যার যার মনের উদ্দেশ্য এবং আকাঙ্খা আল্লাহর দরবারে পেশ করতে পারে। কিংবা ইমাম সাহেব উচ্চঃস্বরে দু‘আর বাক্যগুলো উচ্চারণ করবেন এবং মুক্তাদীগণ ইমামের দু‘আয় ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে মুনাজাতের দু‘আর আওয়াজে মাসবূকের নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। আর বিশেষ কোন উপলক্ষ ছাড়া আওয়ায না করে প্রত্যেকের নিজ নিজ দু‘আ করাই উত্তম এবং মুনাজাত চুপে চুপে করা মুস্তাহাব ও এতে ফজীলত বেশী। শর্ত সাপেক্ষে অর্থাৎ, অন্যের ইবাদতে অসুবিধা না হলে উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ করা জায়িয আছে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • ই’লাউস সুনান, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৬৪
  • কিফায়াতুল মুফতী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩০৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১