নাভীর নিচে পেন্ট পরা

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১৬ মে, ২১

প্রশ্ন

পুরুষ ও মহিলাদের শরীরে ফরজ ও সুন্নাত গুলো কি কি? আজ কাল আমরা যে সব পেণ্ট পড়ি তা নাভীর নীচে থাকে। আর আমি যেখানে থাকি পেন্ট বানীয়ে পরবো যে তা অনেক জামেলা আর খরচ বেশী। আমি না হয় পরলাম। কিন্তু অনেক লোক আছে যার বেতন কম। অনেক ভাই আমার কাছে তা জানতে চাইছে যে, পেন্টের উপর জামা পরলে চলবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনার প্রশ্নটি মূলত মহিলা ও পুরুষের সতর নিয়ে। অর্থাৎ শরীরের কোন অংশ ঢেকে রাখা পুরুষ ও নারীর জন্য আবশ্যক এইতো? এক হল শরীরের পর্দা, আরেক হল শরীরের সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত। অর্থাৎ এতটুকু স্থান অন্য ব্যক্তিদের সামনে ঢেকে রাখা ফরজ। বাকি মানুষের সামনে যাওয়ার সময় ক্ষেত্র ও সমাজ হিসেবে যা শালীন, ও তাকওয়া প্রকাশক করে এমন পোশাক পরিধান করা উত্তম।

আর মাহরামদের সামনে মহিলাদের সতর হল, মাথা, চুল, কান, চেহারা, গর্দান ও সংশ্লিষ্ট সিনার উপরের অংশ, হাত, পা, টাখনু ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর সতর। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ৫/৩২ আর মহিলাদের নামাযের সময় হাত, পা, মুখ ছাড়া পূর্ণ শরীরই সতর। -রদ্দুল মুহতার, ১/৪০৪ মহিলাদের জন্য অন্য সময় গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীরই সতর। তবে অতীব প্রয়োজনে চেহারা, পা, হাত খোলা জায়েজ আছে। যেমন রাস্তায় প্রচন্ড ভীর হলে, আদালতে সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ”لَمَّا نَزَلَتْ: (يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ) (الأحزاب: ٥٩)، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ“ • হযরত উম্মে সালামা e বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় (মাথার দিক থেকে)।” -সূরা আহযাব-৫৯ নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১

হযরত মুফতী শফী i “আহকামুল কুরআন” গ্রন্থে লিখেন যে, فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। -আহকামুল কুরআন-৩/১৪৫৮

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ • হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ e থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল c ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩; মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫; সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮

অন্য বর্ণনায় এসেছে- عَنْ عَائِشَةَ: «أَنَّهَا كَانَتْ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتَقِبَةً» • হযরত আয়শা সিদ্দিকা e বাইতুল্লাহ তওয়াফ করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়। -মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৮৮৫৯

পর্দা পরপুরুষের সাথে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তু লুকানোও ফরজ। কুরআনে কারীমে নির্দেশ এসেছে- وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ • ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে। -সূরা নূর-৩১

এ আয়াতে স্পষ্টভাষায় সৌন্দর্যকে লুকাতে আদেশ দেয়া হয়েছে। যেটা হল পর্দা করার মূল হাকীকত। কিন্তু যা “সাধারণতঃ প্রকাশমান” বলে চেহারা ও হাত উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। যা তীব্র প্রয়োজনের সময় যেমন প্রচন্ড ভীর, আদালতে সাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি প্রয়োজনে খোলা জায়েজ আছে।

এ দুটি বিষয়কে পৃথক করা হয়েছে সতর থেকে। পর্দা থেকে নয়। অর্থাৎ এ দুটি অংশ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু পর্দার অন্তর্ভূক্ত। এ কারণেই নামাযরত অবস্থায় হাত ও মুখ এবং পা ঢাকতে হয় না। এসব খোলা রেখেই নামায হয়ে যায়। কারণ এসব সতর নয়। আর নামাযে সতর ঢাকা ফরজ। কিন্তু বাহিরে বের হওয়ার সময় যেহেতু সতরের সাথে সাথে পর্দা রক্ষা করাও ফরজ, এসব ঢেকে রাখা ফরজ।

সারকথা আপনার মনের প্রশ্ন উদ্রেক হবার মূল কারণ হল, আপনি ভাবছেন এক কাপড় দিয়ে সতর ঢাকা জরুরী। আসলে তা নয়। আসল বিষয় হল সতরটি ঢেকে থাকা। এক কাপড় দিয়ে ঢাকা হল, নাকি একাধিক কাপড় দিয়ে ঢাকা হল সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়।

সুতরাং প্যান্ট দিয়ে যদি সতর ঢাকা না হয়, তাহলে তার উপর শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলে যদি সতরের অংশ ঢেকে থাকে তাহলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে। এটি নিয়ে অযথা টেনশন করার কিছু নেই।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৬ মে, ২১