মুফতি সাহেব,দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল (বাইহাকী)। এই হাদীস নাকি জাল?
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
এ হাদীসটি হযরত হাসান বসরী i থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত। حب الدنيا رأس كل خطيئة. “هب عن الحسن” مرسلا • হাসান বসরী i থেকে বর্ণিত। দুনিয়ার মোহাব্বত সকল পাপের মূল। -কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৬১১৪ অন্য শব্দে এসেছে عَنْ سُفْيَانَ بْنِ سَعِيدٍ قَال: ” كَانَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَقُول: حُبُّ الدُّنْيَا أَصْلُ كُلِّ خَطِيئَةٍ • হযরত সুফিয়ান বিন সাঈদ বলেন, হযরত ঈসা বলতেন, দুনিয়ার মোহাব্বত সকল পাপের মূল। -কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৯৯৭৪
হাদীসটির নিসবত হযরত আনাস বিন মালিক e এর দিকে নিসবত করে রাসূল c পর্যন্ত মারফূ করে জামেউল উসূল গ্রন্থে বর্ণিত। أنس بن مالك – رضي الله عنه - ঃ قا: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ঃ «حُبُّ الدنيا رأسُ كلِّ خَطِيئَة • হযরত আনাস বিন মালিক e বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ার মোহাব্বত সকল পাপের মূল। -জামেউল উসূল, হাদীস নং-২৬০৩
এ হাদীস নিয়ে বিস্তর কালাম রয়েছে। ইবনে আবিদ্দুনিয়া i উপরোক্ত বক্তব্যটিকে হযরত মালিক বিন দিনারের বক্তব্য বলে উদ্ধৃত করেছেন স্বীয় গ্রন্থ “মাকায়েদুশ শয়তান”এ। ইমাম বায়হাকী i স্বীয় “কিতাবুজ যুহদ”গ্রন্থে হযরত ঈসা এর উক্তি বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বায়হাকী i শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থের ৭১ নং অধ্যায়ে ও এ বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছেন। সাঈদ বিন মাসউদ e এর উক্তি বলে উল্লেখ করেছেন ইবনে লাহিয়ার সূত্রে ইবনে ইউনুস তার “তারীখে মিসর”গ্রন্থে। হযরত দায়লামী i তার ফিরদাউস নামক গ্রন্থেও তা উদ্ধৃত করেছেন। আর দায়লামী i এর ছেলে সূত্র ছাড়াই হযরত আলী e কে রাবী সাব্যস্ত করে রাসূল c থেকে মারফূ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইবনে তাইমিয়া i উক্ত বক্তব্যটিকে দৃঢ়তার সাথে হযরত জুনদুব বাজালী e বলে উল্লেখ করেছেন। আলী বিন মাদানী i স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, হযরত হাসান বসরী i এর মুরসাল বর্ণনা যদি সিকা রাবীবৃন্দ বর্ণনা করেন, তাহলে সহীহ। সেই হিসেবে এ হাদীসটিও সহীহ হচ্ছে। হযরত আবূ জুরআ i বলেন, হাসান বসরী i যখনি কোন হাদীসের ক্ষেত্রে قال رسول اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ তখন আমি উক্ত হাদীসের ভিত্তি আমি খুঁজে পেয়েছি। ইমাম দারা কুতনী i বলেন, হাদীসটি জঈফ।
আরো কিছু কালাম উদ্ধৃত করা হল-
১. আল্লামা ইরাকী i বলেন, হাদীসটি মুরসাল। -তাখরীজুল আহয়িয়া-৩/২৪৯
২. আল্লামা সাখাবী i বলেন, হাদীসটি মুরসাল এবং এর সনদ হাসান।(ফাতহুল মুগীছ-১/২৬৫)
৩. আল্লামা সুয়ূতী i বলেন, হাসান বসরী পর্যন্ত এর সনদ আছে, তাই এটি জাল হওয়ার কোন প্রমাণ নেই। -তাদদরীবুর রাবী-১/৪৮৬
৪. মোল্লা আলী কারী i বলেন, এর সনদ হাসান মুরসাল। -আলআসরারুল মারফূআ-১৮৮
৫. মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আলগুজ্জি i বলেন, হাসান সনদে মুরসাল। -ইতকান মাউহসিনু-৩৫৯
৬. আল্লামা যারকানী i বলেন, হাদীসটি হাসান। -মুখতাসারুল মাকাসিদ-৩৫৯
৭. আল্লামা আজলুনী i বলেন, সনদটি হাসান। -কাশফুল খাফা-১/৪১২
৮. আল্লামা জারুল্লাহ আসসাদী i বলেন, হাসান মুরসাল। -আননাওয়াফে-১২০
৯. আল্লামা শাওকানী i বলেন, শক্তিশালী মুরসাল এটি। অর্থটি সহীহ। -আলফাতহুর রাব্বানী-৪/১৭৯২
১০. আলবানী i বলেন, জঈফ। -জঈফুল জামে, নং-২৬৮২
গ্রহণযোগ্য কোন মুহাদ্দিস ও জরাহ তাদীলের ইমামগণ উক্ত হাদীসটিকে জাল-বানোয়াট বলে মন্তব্য করেননি। নাসীরুদ্দীন আলবানী i ও ইবনে উসাইমিন i ছাড়া। নাসীরুদ্দীন আলবানীরও একটি উক্তি এটি দুর্বল তবে জাল নয়। এতসব গ্রহণযোগ্য, জগত বিখ্যাত জারাহ তাদীলের ইমামগণের বক্তব্যের বিপরীতে আলবানী ও উসাইমিন i এর জাল মন্তব্যের গ্রহণ করার কোন সুযোগই নেই। উল্লেখিত মুহাদ্দিসগণ ছিলেন জারাহ তাদীলের ইমাম। আর নাসীরুদ্দীন আলবানী i ও ইবনে উসাইমিন হলেন প্রচলিত সাধারণ মুহাদ্দিস। সুতরাং জারাহ তাদীলের ইমামগণের বক্তব্য উপেক্ষা করে তাদের দু’জনের বক্তব্য নেয়ার কোন অর্থই হয় না। সুতরাং এ হাদীসটিকে জাল বলা ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।
- والله اعلم باالصواب -