দুআয়ে কুনুতের শেষে মুলহিক পড়বে না মুলহাক পড়বে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায১১ মে, ২১

প্রশ্ন

আমরা অনেকেই বিতির নামাজে দুআ কুনূতের শেষে হা‘য়ে যের দিয়ে মুলহিক পড়ে থাকি। এটা ভুল। কারণ, শব্দটি হবে ‘মুলহাক‘ (হা‘য়ে যবর দিয়ে)। আমার ধারণা এই ভুলটি হয়েছে নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনী থেকে। নাদিয়া‘র ‘আদইয়ায়ে মাসনূনাহ‘ নামক বইয়ে শব্দটিকে ‘মুলহিক‘ লেখা হয়েছে। আর এটা হলো ভুল। তাছাড়া অর্থের দিক দিয়েও শব্দটি ‘মুলহাক‘ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সুতরাং আর কোনোদিন কেউ যেনো মুলহিক না পড়েন।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

যিনি বলছেন যে, মুলহিক পড়া ভুল হবে, মূলত তিনিই ভুল করছেন। কারণ মুলহিক এবং মুলহাক উভয়টি পড়াই সহীহ আছে। একটি পড়াকে ভুল বলাটাই আসলে ভুল। আর এতে অর্থের মাঝেও কোন পার্থক্য আসছে না বা অর্থে কোন ভুলও হচ্ছে না। বরং সর্বাধিক প্রসিদ্ধতম মত মুলহিক পড়া মুলহাক পড়া নয়। তবে মুলহাক পড়লে নামায হবে না, বা ভুল পড়া হয় এমনটি ভাবাও ভুল হবে। বরং উভয়টিই পড়া যায়।

হাদীস গ্রন্থে প্রমাণ وَرُوِّينَا عَنْ أَبِي عَمْرِو بْنِ الْعَلَاءِ أَنَّهُ كَانَ يَقْرَأُ فِي دُعَاءِ الْقُنُوت: ” إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ ” يَعْنِي بِخَفْضِ الْحَاءِ • আবূ আমর বিন আলা থেকে বর্ণিত। তিনি দুআয়ে কুনূতে পড়তেন, “ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক”অর্থাৎ হায়ের নিচে যের দিয়ে। -সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩১৪৪

ফিক্বহে হানাফীর কিতাবেঃ

وَاخْتَلَفُوا فِي مُلْحَقٌ وَصَحَّحَ الْإِسْبِيجَابِيُّ كَسْرَ الْحَاءِ بِمَعْنَى لَاحِقٌ بِهِمْ وَقِيلَ بِفَتْحِهَا وَنَصَّ الْجَوْهَرِيُّ عَلَى أَنَّهُ صَوَابٌ(كِتَابُ الصَّلَاةِ- بَابُ الْوِتْرِ وَالنَّوَافِلِ) • মুলহিক শব্দটি নিয়ে মতভেদ আছে। আল্লামা ইসবীজাবী হায়ে যের দেয়াকে সহীহ বলেছেন। অর্থ হবে তখন মুলহিক মানে লাহেক (তথা নিশ্চয় শাস্তি মিলিত হবে কাফেরদের সাথে)।

কেউ কেউ বলেছেন, হায়ে যবর হবে। আল্লামা যাওহারী এটিকে সঠিক বলেছেন। (আলবাহরুর রায়েক, সালাত অধ্যায়, বিতির ও নফল পরিচ্ছেদ) একই বক্তব্য উদ্ধৃত وَمُلْحِقٌ بِالْكَسْرِ أَيْ لَاحِقٌ • মুলহিক হবে হায়ে যের দিয়ে। অর্থ হল লাহিক তথা মিলিত হওয়া। (আলজাওহারাতুন নায়্যিরাহ, সালাত অধ্যায়, বিতির ও নফল পরিচ্ছেদ)

আরো এসেছে, “بالكفار ملحق” أي لاحق بهم بكسر الحاء أفصح وقيل بفتحها • হায়ে যের দিয়ে পড়বে মুলহিক। এটাই অধিক সহীহ। তবে কেউ কেউ বলেছেন যে, হায়ে যবর হবে। (মারাকিল ফালাহ, সালাত অধ্যায়, বিতির পরিচ্ছেদ)

ফিক্বহে মালেকীর কিতাবেঃ

(بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ) بِكَسْرِ الْحَاءِ وَفَتْحِهَا، فَالْكَسْرُ بِمَعْنَى لَاحِقٌ وَالْفَتْحُ بِمَعْنَى أَنَّ اللَّهَ مُلْحِقُهُ بِالْكَافِرِينَ، অনুবাদ- মুলহিক শব্দটি যের এবং যবর উভয়ভাবেই পড়া যাবে। যের দিয়ে পড়লে অর্থ হল, লাহিক। আর আর যবর দিয়ে পড়লে অর্থ হবে আল্লাহ তাআলা কাফেরদের উপর (শাস্তি) ইলহাক তথা প্রয়োগ করেন। (আলফাওয়াকিহুদ দাওয়ানী, বাবু সিফাতিল আমল ফিস সালাতিল মাফরুজা) ফিক্বহে শাফেয়ীর কিতাবেঃ

ان عذابك بالكفار ملحق ” يجوز اسم فاعل بالكسر أي لاحق وبالفتح اسم مفعول • মুলহিক শব্দে হায়ের নিচে যের দিয়ে ইসমে ফায়েল হিসেবে পড়া যেমন জায়েজ আছে, তেমনি ইসমে মাফউল হিসেবে যবর দিয়ে পড়াও জায়েজ আছে। (আলমাজমূ শরহুল মুহাজ্জাব) وملحق بِالْكَسْرِ الْحَاء وَيُقَال بِفَتْحِهَا • হায়ের নিচে যের দিয়ে বা যবর দিয়ে মুলহিক শব্দটি পড়া যায়। (দাকায়েকুল মিনহাজ, সালাত অধ্যায়)

ফিক্বহে হাম্বলীর কিতাবেঃ

وملحق بكسر الحاء لاحق، وإن فتحها جاز • মুলহিক শব্দটি হবে হায়ের উপর যের দিয়ে। তবে যদি কেউ যবর দিয়ে পড়ে তাহলে তাও জায়েজ আছে। (আলকাফী ফী ফিক্বহি ইমাম আহমাদ, বাবু সালাতিত তাতাওয়্যু।)

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১১ মে, ২১