দিল্লুর রহমান (রাজারবাগী) সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

ইসলামী জিন্দেগীসভ্যতা ও সংস্কৃতি২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

ঢাকার রাজারবাগে অবস্থানরত দিল্লুর রহমান নিজেকে পীর বলে প্রচার করে থাকে। এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় খেতাব নেই, যা ঐ ব্যক্তির নামের সাথে ব্যবহার করা হয় না। অথচ লোকটির কথাবার্তা শুনলে এবং তার আস্তানা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা আল-বাইয়্যেনাত-এ তার বক্তব্যের প্রতি নযর ‍বুলালে যা বুঝে আসে, তাতে মনে হয়- লোকটি সহীহ ইলমের অধিকারী কোন আলেম নয়। কোন দীনি বিশেষজ্ঞ লোকের সাথে আলোচনা করলে, তারা তাকে “এনজিওদের গৃহপালিত দালাল মুন্সী” বলে মত পেশ করেন।

এখানে আমার জানার বিষয় হচ্ছে-

ক. লোকটির নাম ‘দিল্লুর রহমান’। নামের শুরুর হরফ দাল হলে এর অর্থ হয় নাকি রহমান তথা আল্লাহর ‍দিল। আর যদি শুরুর হরফ যোয়াদ হয়, তাহলে এ নামের অর্থ হয় আল্লাহ কর্তৃক গোমরাহকৃত। এ ধরণের নাম রাখা শরী‘আতের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ? আর যদি বৈধ না হয়ে থাকে, তবে লোকটি এ নামটি পরিবর্তন না করে ব্যবহার করছে কেন?

খ. লোকটির শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? আসলেই কি সে কোন মাদ্রাসায় পড়ুয়া আলেম?

গ. সে লোকটি ফাতাওয়া ‍দিয়েছে লাল-সাদা রুমাল ব্যবহার নাকি জায়িয নয়। তার ফাতাওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনি যে লোকটি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন, তার ব্যাপারে আমাদের নিকট বিভিন্ন স্থান থেকে এ ধরনের আরো প্রশ্ন এসেছে। তবে আমাদের প্রশ্ন উত্তরের বিভাগটি আমরা যথেষ্ট প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি বিধায় ঐ ধরনের অজ্ঞ লোক সম্পর্কে আলোচনা এখানে ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। আমাদের পত্রিকাসহ বড় বড় কওমী মাদ্রাসার মুখপত্র সহীহ দীনি পত্র-পত্রিকা নিয়েও সে অনেক আপত্তিকর কথা বলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু ওসবকে আমারা পাগলের প্রলাপ ভেবে তার জওয়াব দিতেও যাইনি। তবে বিভ্রান্তির হাত থেকে সাধারণ লোকেরা যাতে রক্ষা পায়, সে জন্য আপনার প্রশ্নের উত্তর নিম্নে দেয়া হচ্ছেঃ

ক. আপনি ‍দিল্লুর রহমান নামের যে ব্যাখ্যা করেছেন, তার প্রথমটিকে গ্রহণ করে তার প্রকাশিত বাইয়্যিনাত পত্রিকার একটি সংখ্যায় লোকটি নিজেও স্বীকার করেছেন। কিন্তু আপত্তি হল- আরবীতে দিল্লুন এর অর্থ ‍দিল আসে না, আর যদি ফারসী ধরা হয়, তাহলে হবে দিলে রহমান। সেক্ষেত্রে ‍দিল্লুন সহীহ হবে না। তাছাড়া রহমানের দিল একথাটা বলাও সহীহ না। এসব দিক বিবেচনা করলে, এ অর্থে কোন নাম রাখা শরী‘আতের দৃষ্টিতে নাজায়িয। প্রকৃতপক্ষে ‍দিল বুঝাতে আরবীতে দিল্লুন কোন শব্দ নেই। তথাপি এ হুকুম হচ্ছে তার প্রদত্ত ব্যখ্যার ভিত্তিতে। আপনি জানতে চেয়েছেন- নামটি অবৈধ হলে, সে এটি পরিবর্তন করে না কেন? এ বিষটি আমরা কিভাবে বলবো? এটি আপনি সরাসরি তাকে বা তার দরবারী লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আর আপনি তার নামের দ্বিতীয় যে অংশটি প্রকাশ করেছেন, “পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ” মূলতঃ এটিই যথার্থ মনে হয়। আর এজন্য তার কর্মকান্ডে গোমরাহী প্রকাশ পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে তার নামের সাথে তার কর্মকান্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

খ. আপনি জানতে চেয়েছেন- তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? এ ব্যাপারে আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে খোঁজ-খবর নিয়ে যা জানতে পেরেছি, তা হচ্ছে- লোকটি আদৌ কোন মাদ্রাসায় পড়ুয়া আলেম নয়। জেনারেল লাইনে ইন্টারমিডিয়েট পাশ। সে একজন মাওলানা সাহেবের কাছে প্রাইভেট ভাবে মাদ্রাসার প্রাথমিক পর্যায়ের দু’চারটা কিতাব পড়েছে মাত্র। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য তার সামনে যে কোন একটি তাফসীর বা ফিকাহর কিতাব যেমন, তাফসীরে বায়যাবী শরীফ, ফাতাওয়ায়ে শামী ইত্যাদি খুলে ধরলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন- তার নামের টাইটেলের বহর নিতান্তই অন্তঃসার শুন্য।

গ. রুমাল ব্যবহার নাজায়িয সংক্রান্ত তার ফাতাওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিচার করলেই বুঝা যাওয়ার কথা। ফাতাওয়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ইলম ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। সেমতে দীনী ব্যাপারে একটা চরম অনভিজ্ঞ, মূর্খ ও আনাড়ী টাইপের লোক ফাতাওয়া দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে তা আমরা বলি কিভাবে ? আপানারা নিঃসংকোচে সাদা-লাল মিশ্রিত রুমাল ব্যবহার করুন। এতে শরী‘আতের দৃষ্টিতে কোন আপত্তি নেই। পুরুষের জন্য শরীয়াত যে লাল রঙের ব্যবহার মাকরুহে তানযীহী করেছে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- খালিস লাল রং। যার মধ্যে অন্য কোন রংগের মিশ্রণ নেই। এ রূমালে যেহেতু সাদা রংগের মিশ্রণ আছে, সুতরাং তা ব্যবহার করা জায়িয হবে।

অল্পবিদ্যা ভয়ংকর বলে যে একটা কথা আছে, এখানে সে প্রবাদটি বাস্তবায়িত হয়েছে। লোকটি হয়ত কারো থেকে শুনেছে যে, শরী‘আতে পুরুষদের জন্য লাল রং-এর লেবাস মাকরূহ করা হয়েছে। আর তার উপর ভিত্তি করেই ফাতাওয়া মেরে দিয়েছে। এর মধ্যে যে ব্যাখ্যা ‍বিশ্লেষণ আছে, তা আর তলিয়ে দেখার সুযোগ তার হয়নি। হবেই বা কেমনে, তার তো সেই যোগ্যতা নেই।

আসল ব্যাপার হল- ইসলাম আজ বিজাতীয়দের দ্বারা চরমভাবে আক্রান্ত। ইসলাম বিদ্বেষীরা বিভিন্ন কৌশলে ইসলামের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করছে।

কখনো আবার ওরা ইসলামের বহুরূপী শত্রুদের অল্প মূল্যে ভাড়া করে তাদের থেকে কাজ ‍নিচ্ছে। আর সেজন্য ব্যবহার করছে দিল্লুর রহমান টাইপের কিছু লোককে।

তার নামের সাথে তাজুল মুফাসসিরীন, মুফতীউল আযম ও রঈসুল মুহাদ্দেসীনসহ এ জাতীয় অন্ততঃ ২৫/৩০টা আবার কখনো আরো বেশী টাইটেল ব্যবহার করে থাকে। নিজের নামে সেচ্ছায় এ ধরনের টাইটেল ব্যবহার করা- যে ধরনের যোগ্যতা তার মধ্যে নেই, এটা নিতান্তই প্রতারণা, অহংকার ও তাকাব্বুর সুলভ কাজ । হাদীস শরীফে আছে- যে ব্যক্তি এমন বিষয় প্রকাশ করবে যা তার মধ্যে নাই সে ব্যক্তি মিথ্যার দুটি পোষাক পরিধানকারীর ন্যায়। -বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত শরীফ, ২৮১

এহেন ভন্ডামিকে বৈধতার জামা পড়াতে সে এগুলোকে সুন্নাত বলে প্রচার করে থাকে। এ সুন্নাত নবীজীর c সুন্নাত নয়। বরং এটি শয়তানী স্বভাবের নিয়মনীতি মাত্র।

এগুলো যদি সুন্নাত হয়, তবে সুন্নাতে নববীর নির্ভেজাল অনুসারী সাহাবা, তাবেয়ী, মুহাদ্দিস ও মুফতিয়ানে কেরামসহ যুগে যুগে আবির্ভুত বুযুর্গানে দীন কেন এ সুন্নাতটাকে পালন করেননি। তারা তো তাদের নামের সাথে এতগুলো টাইটেল ব্যবহার করতেন না।

তার উপাধিগুলোর মধ্যে নিজেকে রইসুল মুহাদ্দিসীন বলে যাহির করে থাকে। এ জাতীয় ভন্ডদের শায়েস্তা করার সব চাইতে সহজ ও মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে - ওদের সামনে যে কোন একটি হাদীসের কিতাব খুলে ‍দিয়ে শুধু ইবারত পড়তে বলুন। ‍দেখবেন মুহুর্তেই ওদের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।

দেশের সঠিক দীন ও রুচিশীল সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ খিদমতে ‍নিয়জিত মাসিক মদিনা, আত-তাওহীদ, আর রশীদ, মঈনুল ইসলাম, কা’বার পথে প্রমুখ মাসিকী সমূহ এবং এসব দীনী পত্রিকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ও মিথ্যা, ভিত্তিহীন আজে বাজে প্রলাপ বকাই ওর এবং ওর বাইয়্যেনাত পত্রিকার দায়িত্ব বলে মনে হয়।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • ইমদাদুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১২৫
  • কিফায়াতুল মুফতী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৪৬
  • আলমগীরী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৩২

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১