তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া

ইসলামী জিন্দেগীমসজিদ-মাদ্রাসার বিধান২৪ ফেব, ২১

প্রশ্ন

আমরা সাধারনতঃ তারাবীহ নামাযের জন্য বাহির হতে হাফেজ রেখে থাকি এবং রোযার শেষ দিকে মুসুল্লীদের নিকট এলান দিয়ে তাদের নিকট থেকে স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হাদিয়া উঠিয়ে হাফেজ, ইমাম, মুআযযিন ও খাদেমের মধ্যে বিতরন করে থাকি। শরী‘আতের হুকুম অনুযায়ী এটা জায়িয কি- না?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ইমাম, মুআযযিন ও খাদেমদেরকে রমাযান বা ঈদ উলপক্ষে বেতনের পরও কিছু বোনাস ইত্যাদি মসজিদ ফান্ড থেকে অথবা মুসল্লিরা স্বেচ্ছায় দিলে তা দেয়া জায়িয আছে। কিন্তু হাফেয সাহেবকে তারাবীহ্ পড়ানোর জন্য কোন ফান্ড থেকেই টাকা বা বিনিময় দেয়া ও হাফেয সাহেবের জন্য তা নেয়া জায়িয নয়। আমাদের দেশে মসজিদ কমিটি খাতা- কলম নিয়ে যেভাবে হাফেয সাহেবের জন্য চাইতে থাকেন এবং মসজিদে এলান দেন, তাতে এটাকে কোন মতেই হাদিয়া বলা চলে না। হাদিয়া মুহাব্বতের নিদর্শন। যা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সুতরাং আমাদের দেশের এ ধরনের লেন-দেন কুরআনের অবমাননা ও নাজায়িয কাজ। এতে খতমে তারাবীহের সাওয়াব বাতিল হয়ে যেতে পারে। হাফেজগনকে আল্লাহ তা‘আলা যে নিয়ামত দান করেছেন, তার শুকরিয়া এটাই যে, তারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারাবীহ নামাযে কুরআন শুনাবে এবং এর মহাপ্রতিদান আল্লাহ্র দরবার থেকে পাওয়ার আশা রাখবে। হিফজের মত এতবড় দৌলত সারা দুনিয়া যার বদলা হতে পারে না, সেই দৌলতকে অতি নগণ্য সামান্য টাকা–পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করার মত বেওকুফি আর হয় না। হাফেজগন আল্লাহ্র ওয়াস্তে কুরআন শুনাবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের দুনিয়ার জরুরত পুরা করে দিবেন। কোথা থেকে করবেন, তা তিনিই ভাল জানেন। তাঁর দরবারে কোন অভাব নেই। তিনি অকল্পনীয়ভাবে বান্দাকে রিযিক দেন। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি ঐ হাফেয সাহেবকে তার দ্বনিদারীর কারনে তাকে মুহাব্বত করেন, তাহলে মুহাব্বতের নিদর্শন স্বরূপ ব্যক্তিগতভাবে যে কোন সময় বা যখনই তাওফীক হয়, হাফেয সাহেবের মুহাব্বতে কিছু হাদিয়া পেশ করবেন। তবে এটা তারাবীহের শেষে না হওয়া উচিত। যাতে করে বুঝা যায় যে, এটা বাস্তবেই ব্যক্তিগত মুহাব্বতের হাদিয়া। দুনিয়াবী বিনীময় ছাড়া কেবল আল্লাহ্i ওয়াস্তেই নামায পড়াবে। এমন মুখলিস হাফেয পাওয়া না গেলে, ওয়াক্তিয়া ইমামের পিছনে সূরা তারাবীহ পড়া, পেশাদার হাফেযের পিছনে খতমে তারাবীহ পড়া থেকে উত্তম। -প্রমানঃ ইমদাদুল ফাতাওয়া ১ঃ৪৮৪ # আহসানুল ফাতাওয়া, ৩ঃ৫১৪ # ইমদাদুল মুফতীন, ৩৬৫

{وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ } (البقر: 41)

ان القرآن بالاجرة لايستحق الثواب لا للميت ولا للقارئ. (رد المحتا:6/56)

عن عبد الله بن مغفل انه صلي الناس في شهر رمضان فلما كان يوم الفطر بعث اليه عبد الله بن زياد محلبة وبخمس مائة درهم فردها و قال انا لا نأخذ علي القران اجرا. -مصنف ابن ابي شيبة -2/1292

وان القران لشيئ من الدنيا لا تجوز وان الاخذ و المعطر اثمان لان ذلك يشبه الاستجار علي القرائة و نفس الاستئجار عليها لا يجوز – (رد المحتار-6/73)

ইদানীং অনেকে এরুপ একটা সুরাতকে জায়িয বলে মনে করেছেন যে, হাফেয সাহেবকে যদি রামাযানে একমাসের জন্য ৫ ওয়াক্ত বা নির্দিষ্ট দুই তিন ওয়াক্তের জন্য ইমাম বানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তার জন্য টাকা নেয়া জায়িয।

কিন্তু হযরত মাওঃ আশরাফ আলী থানবী i ইমদাদুল ফাতাওয়ার ১ঃ৪৮৫ পৃষ্ঠায় এই সুরাতকেও এই জন্য নাজায়িয বলেছেন যে, যদিও তাকে রমাযান মাসের জন্য ইমাম বানিয়ে নেওয়া হয়, তবুও তার মূল উদ্দেশ্য থাকে তারাবীহের নামায। কেননা- উক্ত হাফেয সাহেব যদি শুধু ওয়াক্তিয়া নামায পড়ান আর তারাবীহ না পড়ান, তাহলে তাকে ইমাম রাখা হবে না। তাই দ্বীনী ব্যাপারে এরূপ হীলা জায়িয নয়। উল্লেখ্য ফাতাওয়ার কিতাবে ঊলামাগনের ইখতিলাফ বর্ণনা করতে যেয়ে শক্তিশালী ও দুর্বল উভয় ধরনের কাওল উল্লেখ্য থাকে। শেষে নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ মতটি বর্ণিত হয়, সেটার উপরই মুফতীয়ানে কিরাম ফাতওয়া দিয়ে থাকেন। কিন্তু অধুনা নামদারী কিছু আলেম ফাতাওয়ার কিতাবের দুর্বল কাওলের ভিত্তিতে তারাবীহ নামাযের বিনিময় নেয়া জায়িয বলছেন। হাক্কানী উলামাগনের নিকট এটা সহীহ নয়। সুতরাং মুসলমানদের উচিত নিজেদের আমলের হেফাজতের লক্ষ্যে যার তার ফাতাওয়ার উপর আমল না করা। বর্তমানে নিঃস্বার্থ ও হাক্কানী উলামাগনের সংখ্যা খুবই কম। খুঁজে বের করে তাদের অনুসরন করতে হবে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • ইমদাদুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৮৫
  • আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৫১৪
  • ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা: ৩৯২
  • ইমদাদুল মুফতীন, পৃষ্ঠা: ৩৬৫
  • তালীফাতে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা: ৩২৫
  • শামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৮
  • ফাতাওয়ায়ে মাহ্‌মূদিয়া, খন্ড: ১৪, পৃষ্ঠা: ৩২

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৪ ফেব, ২১