তওবা ও সালাতুত তাসবীহ নামায প্রসঙ্গে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায১৮ এপ্রিল, ২১

প্রশ্ন

১. আমাদের মসজিদের হুজুর বলেছে মরার আগে এক বার হলেও তওবা করে মরতে। আমি কখন মারা যাব জানি না তাই আমি তওবা করতে চাই। তওবা কিভাবে করে?

২. আমি জানি জীবনে একবার হলেও নামাজ পড়তে হবে। যা আমাদের নবী তাঁর চাচা কে বলেছিলেন সাপ্তাহে বা মাসে বা বছরে বা জীবনে একবার হলেও পড়তে। এই সালাতুত তাসবীহ নামাজ পড়ার বিস্তারিত নিয়মটা জানাবেন?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

তওবা প্রসঙ্গেঃ

انَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ۞ وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا • অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। -সূরা নিসা, ১৭-১৮

তাওবা করার পদ্ধতি তওবা হওয়ার জন্য শর্ত তিনটি। যথা-

১. গোনাহ ছেড়ে দেয়া।

২. গোনাহের কাজটি ভবিষ্যতে আর না করার দৃঢ় অঙ্গিকার করা।

৩. পূর্ব গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

এ তিনটি কাজ পাওয়া গেলে এরই নাম তওবা। এছাড়া কোন হক্কানী বুজুর্গের হাত ধরে বাইয়াত হয়ে গোনাহ ছেড়ে পূণ্যের কাজ করার বাইয়াত করার মাধ্যমেও তওবা করা যায়। তবে তওবার জন্য এটি জরুরী নয়। নিজে নিজে উপরোক্ত তিনটি কাজ করার দ্বারাই তওবা পূর্ণ হয়ে যায়।

সালাতুত তাসবীহ পড়ার পদ্ধতিঃ

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِب: يَا عَبَّاسُ، يَا عَمَّاهُ، ” أَلَا أُعْطِيكَ، أَلَا أَمْنَحُكَ، أَلَا أَحْبُوكَ، أَلَا أَفْعَلُ لَكَ عَشْرَ خِصَالٍ إِذَا أَنْتَ فَعَلْتَ ذَلِكَ، غَفَرَ اللَّهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَقَدِيمَهُ وَحَدِيثَهُ، وَخَطَأَهُ وَعَمْدَهُ، وَصَغِيرَهُ وَكَبِيرَهُ، وَسِرَّهُ وَعَلَانِيَتَهُ، عَشْرُ خِصَال: أَنْ تُصَلِّيَ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، تَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ، فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الْقِرَاءَةِ فِي أَوَّلِ رَكْعَةٍ، قُلْتَ وَأَنْتَ قَائِم: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ تَرْكَعُ فَتَقُولُ وَأَنْتَ رَاكِعٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ الرُّكُوعِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَهْوِي سَاجِدًا فَتَقُولُهَا وَأَنْتَ سَاجِدٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَسْجُدُ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، فَذَلِكَ خَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ، تَفْعَلُ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ، إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تُصَلِّيَهَا فِي كُلِّ يَوْمٍ مَرَّةً فَافْعَلْ، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَفِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي كُلِّ شَهْرٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي عُمُرِكَ مَرَّةً

“ ইবনে আব্বাস e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ c আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিবকে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনার নিকটে আসব না? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎ গুনের বর্ণনা করব না যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পিছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত কৃত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন? আর সে দশটি সৎ গুন হলোঃ আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাআত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেনঃ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) এরপর রুকুতে যাবেন এবঃ রুকু অবস্থায় (উক্ত দুআটি) ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন। যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন,তবে প্রতি জুমাআয় একবার। যদি প্রতি জুমআয় না করেন তবে প্রদি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন তবে জীবনে একবার। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১২১৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৬৯৫ হাদীসটি সহীহ।

দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসবে তখন আগে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বে তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবে। অতঃপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তাসবীর বাংলা উচ্চারণ হলো-“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” কোন এক স্থানে উক্ত তাসবীহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবে। আর এই নামাযে কোন কারণে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে না। তাসবীহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।

বিঃ দ্রঃ সালাতুত তাসবীহ পড়ার আরো একটি নিয়ম রয়েছে। তবে উপরোল্লিখিত নিয়মটি উত্তম।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৮ এপ্রিল, ২১