জান্নাতের জন্য ইবাদত করা

ইসলামী জিন্দেগীআকীদা২৩ ফেব, ২১

প্রশ্ন

এক লেখক লিখেছেন, “যারা পরকালে দোযখ থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করেন, তারা শিরক করেন। তাদের ইবাদত বরবাদ হবে।” কুরআন-হাদীসের আলোকে লেখকের বক্তব্য কতটুকু ঠিক?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

এরূপ কোন কথা কুরআন-হাদীসে পাওয়া যায় না। বরং কুরআনুল কারীমে মহান রাব্বুল ‘আলামীন জান্নাতের নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন, তারপর জান্নাত পাওয়ার জন্য আমল করতে আদেশ দিয়েছেন। যেমন সূরা সাফফাতে ইরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয় ইহা (জান্নাত পাওয়া) মহা সাফল্য, এরূপ সাফল্যের জন্য আমলকারীদের আমল করা উচিত।”

এ ছাড়া হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত মু’আয e থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, তরজমাঃ “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে বললাম- হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এরূপ কিছু আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থকে দূরে রাখবে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলরেন, “নিশ্চয় তুমি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করেছ। ইহা ঐ ব্যক্তির জন্য সহজ- যার জন্য আল্লাহ পাক সহজ করে দেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন- আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করবে। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং নামায কায়েম করবে। যাকাত আদায় করবে। রমযানের রোযা রাখবে এবং হজ্জ করবে।”

অত্র হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম জান্নাত পাওয়ার ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য আমল বলে দিলেন। যদি জান্নাত পাওয়ার উদ্দেশ্যে এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ইবাদত করলে শিরক হতো, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম মু’আযকে e অবশ্যই বলে দিতেন যে, তুমি জান্নাত পাওয়ার এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ইবাদত করো না। কেননা, এটা শিরক। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম একথা বলেননি, তাই এই হাদীসই এবং এ ধরণের আরও অনেক হাদীস উক্ত লেখকের কথা ভিত্তিহীন প্রমাণ করে। তবে একথা বলা যেতে পারে যে, প্রতিটি মু’মিন জান্নাত ও জাহান্নামের উর্ধ্বে ওঠে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে পারলে সেটা ইখলাসের অনেক উঁচু স্তর হবে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন হয়ে গেলে জান্নাতও হাসিল হবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ হবে। অবশ্য সর্ব অবস্থায় আল্লাহর দরবারে জান্নাতের কামনা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য দু’আ করতে হবে। এটা রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম নির্দেশ। রমযানে যে দু’টি কাজ বেশী বেশী করার জন্য রাসূলুল্লাহ পরামর্শ দিয়েছেন। এ দু’টিই হল- জান্নাতের জন্য দু’আ এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রানের জন্য দু’আ করা।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মা‘আরিফুল কুরআন, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৩৩
  • মিশকাত শরীফ, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৪
  • সূরা: সাফফাত, আয়াত: ৬০

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ ফেব, ২১