চার খলীফার তাকলীদ রেখে চার ইমামের তাকলীদ কেন

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসসিরাত ও ইতিহাস১১ মে, ২১

প্রশ্ন

এ উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম ইমাম আবু হানীফা i এর তাকলীদ করার কথা কেন বলে থাকেন? তাছাড়া তারা একথাও বলে থাকেন যে, ইমাম আবু হানীফা i এর তাকলীদ যদি না করা হয়, তাহলে অন্তত ইমাম শাফেয়ী i , ইমাম মালিক i এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল i এর মাঝে যেকোন একজন ইমামের তাকলীদ করতে হবে। অথচ এ চার ইমামের চেয়ে হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ আবু বকর সিদ্দীক e , হযরত ওমর e , হযরত উসমান e এবং হযরত আলী e এর মত খলীফায়ে রাশেদের তাকলীদ করার কথা কেন বলা হয় না? তাহলে কি চার ইমামগণ চার খলীফা থেকেও বেশি জ্ঞানী?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনার প্রশ্নটি যৌক্তিক। তবে না বুঝার কারণে আপনার মনে এমন প্রশ্ন উদয় হয়েছে। মূল কারণ হল, আমরা যদি বলি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক e এর তাকলীদ করা হোক। তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দীক e এর তাকলীদ করলে তাঁর কাছে ছিল কুরআন, রাসূল c এর হাদীস এবং তার নিজস্ব ফাতওয়া। কিন্তু হযরত উমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী e এর ফাতওয়া কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দীক e এর কাছে ছিল না? তাই তাঁর তাকলীদ করলে আমরা বাকি তিন খলীফায়ে রাশেদের ফাতওয়া থেকে বঞ্চিত থাকছি। একইভাবে আমরা যদি উমর e এর তাকলীদের কথা বলি, তাহলে হযরত উমর e এর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর e এর ফাতওয়া এবং তাঁর নিজের ফাতওয়া রয়েছে। বাকি উসমান e এবং হযরত আলী e এর ফাতওয়া থাকছে না। একই অবস্থা হযরত উসমান e এর তাকলীদের কথা বললে। হযরত আলী e এর তাকলীদের কথা বললে তাঁর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর e , হযরত উমর e , হযরত উসমান e এর ফাতওয়া এবং হযরত আলী e এর নিজস্ব ফাতওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু তৎকালীন জিবীত থাকা ও মৃত্যুবরণ করা বাকি সাহাবীদের ফাতওয়া পাচ্ছি না। এ কারণে সাহাবীদের পরবর্তীতে তাবেয়ী ইমাম আবু হানীফা এবং তাবে তাবেয়ী ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমাদ বিন হাম্বল i এর তাকলীদের মাধ্যমে কুরআন, হাদীস এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের ফাতওয়াও পাওয়া যায়। আর আমাদের কাছে কুরআন হাদীসের সাথে সাহাবাগণও অনুসরণীয়। وعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ • হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধর। এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধর আমার পরে। এগুলোকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০১২৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৯২২, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩২৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪২০১, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৪৩৭, মাশকিলুল আসার, হাদীস নং-৯৯৮)

তাই চার ইমামের তাকলীদ করার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের মাসায়েল পাওয়া যাচ্ছে। যা শুধু চার খলীফার তাকলীদ করলে পাওয়া যেতো না। আর আমরা বিশেষ করে ইমাম আজম আবু হানীফা i এর অনুসরণ এ জন্য করে থাকি যে, যেহেতু হযরত আলী e সম্পর্কে রাসূল c ইরশাদ করেছেন যে, عن ابن عباس رضي الله عنهما قا: قال رسول الله صلى الله عليه و سل: أنا مدينة العلم و علي بابها فمن أراد المدينة فليأت الباب • হযরত ইবনে আব্বাস e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ আমি হলাম ইলমের শহর। আর আলী হল এর দরজা। সুতরাং যে ব্যক্তি শহরে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন দরজা দিয়ে আসে। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৪৬৩৭, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারী, হাদীস নং-১১০৬১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩২৮৯০, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৫৭৪২

যেহেতু আমরা ইলমের শহর রাসূল c এর ইলম পর্যন্ত পৌঁছতে চাই দরজা দিয়ে। আর ইলমের দরজা হযরত আলী e কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর e , হযরত উমর e এবং হযরত উসমান e এর ফাতওয়াসহ কুফায় এসে শুয়ে আছেন। তাই সেই কুফায় জন্ম নেয়া ইমামে আজম i এর তাকলীদ করার মাধ্যমে এই সকল ইলমের দরজা দিয়ে রাসূল c এর ইলমের শহরে প্রবেশ করে থাকি। এ কারণে আমরা ইমাম আজম আবু হানীফা i এর তাকলীদ করে থাকি। যেহেতু তার কাছে সকল ইলমের ভান্ডার এসে পৌঁছেছে হযরত আলী e সহ অন্যান্য সাহাবীগণের পদচারণায় ধন্য কুফায়।

জবাব নং-২ঃ তাকলীদ করার ক্ষেত্রে একটি জরুরী বিষয় হল, যে গ্রহণযোগ্য মুজতাহিদের মাযহাব আমলীসূত্রে দ্বীনের সকল দিকের মাসায়েল সংরক্ষিত আকারে আসতে হবে। যদি মুজতাহিদের মাযহাব পরিপূর্ণ দ্বীনের সমাধান আমলীসুত্রে না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত মুজতাহিদের মাযহাবের অনুসরণ করা যায় না। এখন আমাদের কাছে কি চার খলীফার মাযহাব পরিপূর্ণভাবে আমলীসুত্রে এসেছে? চার ইমামের মাযহাবের উপর কি কোন পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ আছে? যদি থাকে, তাহলে পেশ করুন। আমরা চার খলীফার মাযহাব মানতে প্রস্তুত। যেহেতু চার খলীফার মাযহাব পরিপূর্ণভাবে লিপিবদ্ধ আকারে আমাদের কাছে আসেনি, তাই আমরা চার খলীফাসহ তাবেয়ীগণ থেকে যারা পরিপূর্ণ দ্বীনের মাসায়েল একত্রিত করেছেন। এবং আমাদের কাছে আমলীসুত্রে সে মাযহাব পৌছেছে, আমরা সে মাযহাব অনুপাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীনের অনুসরণ করে থাকি।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১১ মে, ২১