গ্রামে জুম‘আর নামায আদায় করা

ইসলামী জিন্দেগীনামায২৩ ফেব, ২১

প্রশ্ন

গ্রামাঞ্চলে জুম‘আর নামায জায়িয কি-না? আমাদের গ্রামে রাস্তা-ঘাট আছে, মোটামুটি প্রয়োজনীয় জিনিস দোকানে পাওয়া যায়। শিক্ষা-দিক্ষার ব্যবস্থাও আছে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

গ্রামে জুম‘আ জায়িয কি-না একথা জানার পূর্বে গ্রাম কাকে বলে এবং শহর কাকে বলে তা জানা প্রয়োজন। কারণ- জুম‘আর নামায সহীহ হওয়ার জন্য শহর, উপশহর বা বৃহৎ গ্রাম হওয়া শর্ত। ছোট গ্রামে জুম‘আ সহীহ হয় না। শহর ও বৃহৎগ্রামের সংজ্ঞা জানলেই বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে জুম‘আ সহীহ হওয়া-না হওয়া সহজে নিরুপণ করা যাবে।

শহর ও বৃহৎ গ্রাম-এর সংজ্ঞা বহির্ভূত যে সকল ছোট পল্লী পাওয়া যাবে, তাতে জুম‘আ সহীহ হবে না। -হিদায়া ১ঃ১৬৮

শহর ও বৃহৎ গ্রামের সংজ্ঞাঃ

হযরত ইমাম ইউসুফ i হতে একটি রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে, যার অর্থ, শহর বা বৃহৎ গ্রাম ঐ আবাদীকে বলা হয়, যেখানের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ লোকগণ সেখানের সবচয়ে বড় মসজিদে একত্রিত হলে, মসজিদে স্থান সংকুলান হয় না। শহর বা বড় গ্রামের সংজ্ঞার ব্যাপারে অনেক মত থাকলেও হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ i এর উল্লেখিত সংজ্ঞাই অধিকাংশ ফুকাহাগণ গ্রহণ করেছেন এবং এর উপরই ফাতাওয়া দিয়েছেন।

অতএব, যে আবাদীর বয়ঃপ্রাপ্ত সুস্থ পুরুষের সংখ্যা এত বেশী যে, সেখানকার বড় মসজিদে একত্রিত হলে মসজিদে তাদের সংকুলান হয় না, তাকে শরয়ী শহর বা বৃহৎ গ্রামের অন্তর্ভূক্ত বলা হবে এবং সেখানে জুম‘আ আদায় করা জরুরী হবে। এই সংজ্ঞা যেখানে পাওয়া যাবে না, তাকেই গ্রাম বলা হবে। এরূপ গ্রামে জুম‘আ সহীহ হবে না। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের পরিভাষায় যে গ্রামের প্রচলন আছে, তার অধিকাংশই শরী‘আতের দৃষ্টিতে শহর বা শহরতুল্য বড় গ্রামের আওতায় পড়ে। তাই সেখানে জুম‘আ পড়া জরুরী। না পড়লে, গুনাহগার হতে হবে এবং হাদীসে এর উপর যেই ধমকি এসেছে, তার কোপানলে পড়তে হবে। নবী c ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বিনা উযরে ইচ্ছাপূর্বক তিন জুম‘আ তরক করে, তার উপর (নাফরমানীর) মহর মেরে দেয়া হয় (আবূ দাউদ শরীফ)। উক্ত মাসআলার আলোকে বর্ণনা অনুযায়ী প্রশ্নে বর্ণিত গ্রামটি শহরের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং উক্ত গ্রামে জুম‘আর নামায সহীহ হবে। বরং উক্ত গ্রামে জুম‘আর নামায পড়া জরুরী। না পড়লে, সকলেই গুনাহগার হবে। প্রশ্নে বর্ণিত গ্রামটি যদিও আমাদের পরিভাষায় গ্রাম। কিন্তু শরী‘আতের পরিভাষায় তা শহর বা বৃহৎগ্রামের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য যে, এরূপ স্থানে অনেকে ‘আখিরী যুহর’ বা ‘ইহতিয়াতুল যুহর’ পড়ে থাকেন তা নিতান্তই ভুল ও বর্জনীয়।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • আদ-রুররুল মুখতার, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৩৭
  • বাদায়েয়ূস সানায়ে, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৬০
  • আল-বাহরুল রায়িক, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৪৫

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ ফেব, ২১