গীবত থেকে বাঁচার উপায়

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ১০ এপ্রিল, ২১

প্রশ্ন

গীবত করা থেকে বাঁচার উপায় কী?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَال: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُو: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَال: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَال: إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ

হযরত আবু হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম বলেছেন, তোমরা কি জান, গীবত কী? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, গীবত হল তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হল, আমি যা বলেছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে।

গীবতের দুই সুরত। এক হল গীবত করা। আর আরেক হল গীবত শোনা। উভয়ই গোনাহের কাজ। এরকম গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার সহজ উপায় হল, গীবত করতে মনে চাইলেই কুরআনের আয়াত ও রাসূল c এর হাদীস মনে করা। যেমন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ • মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। -সূরা হুজুরাত-১২ অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ • প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ। -সূরা হুমাজা-১

عَنْ أَبِي سَعْدٍ، وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: ”الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا“، قَالُو: يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَال: ”إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِ“ وَفِي رِوَايَةِ حَمْزَةَ ”فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ لَهُ، وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يَغْفِرَهَا لَهُ صَاحِبُهُ

হযরত আবু সাঈস এবং জাবের বিন আব্দুল্লাহ e থেকে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ গীবত করা ব্যভিচার করার চেয়েও জঘন্য। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত করা ব্যভিচারের চেয়ে জঘন্য হয় কি করে? রাসূল c বললেনঃ নিশ্চয় ব্যভিচারকারী ব্যভিচার করে তওবা করে থাকে, ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করা হয় না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে তাকে ক্ষমা করে। -আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫৯০

যখনি গীবত করার কথা মনে আসবে, কিংবা কেউ আপনার কাছে বলতে চাইবে তখনি এসব আয়াত ও হাদীসের কথা মনে করুন। যিনি আপনাকে বলতে চাচ্ছে তাকে শুনান গীবত সংক্রান্ত মারাত্মক সব ধমকি সম্বলিত আয়াত ও হাদীসের কথা। আশা করি গীবতের মত ভয়াবহ গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলা হিফাযত করবেন।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২,৫৮৯
  • সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং: ১১,৪৫৪
  • সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং: ৫,৭৫৮
  • মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং: ১,৪১৭
  • সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং: ২১,১৬৩
  • শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং: ৬,২৯৩
  • শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং: ৬,৩১৫

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১০ এপ্রিল, ২১