গীবত করা কখন জায়েজ কখন নাজায়েজ

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১৭ মে, ২১

প্রশ্ন

আমরা জানি, গীবত বা পরনিন্দা করা একটি বড় গুনাহের কাজ। ধরলাম একজন মানুষ অত্যন্ত লম্পট প্রকৃতির ও দুর্নীতিবাজ। এখন যদি অপর কাউকে তার এই দুর্নীতি বা দুশ্চরিত্রের কথা (যা একেবারেই সত্য) যদি বলে দেয়া হয়.. স্বেচ্ছায় অথবা অপর কারো প্রশ্নের জবাবে… তাহলে কি এটা গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে? কোন ক্ষেত্রে একজন মানুষের নেতিবাচক আচরণের কথা অপরকে বলা যায়? যদি অপরকে সতর্ক করার উদ্দেশে এই কথা বলা হয় তবে কি তা গীবত হবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

প্রশ্নে উল্লেখিত কারণে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করা জায়েজ আছে যিনি এর সমাধান করতে পারবেন, বা তার খারাবী থেকে রক্ষা পেতে পারবেন, না বললে যে বিপদে পড়তো,তার কাছে গীবত করাটা জায়েজ হবে। তবে সীমাতিরিক্ত বলবে না। বরং যতটুকু বললে, মানুষ খারাপ ব্যক্তিটির খারাপী থেকে নিরাপদ থাকতে পারে, ততটুকু বলবে। ছয়টি কারণে গীবত করা জায়েজ আছে। যথা-

১. জুলুম থেকে নিচে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।

২. খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।

৩. বিষয়টি সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানতে গীবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, আমাকে অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি

৪. সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদীস, আসার ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। উদাহরণতঃ মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান এমন ভ্রান্ত মানসিকতা ও মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিদের দোষ মানুষের কাছে বলা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাযতের জন্য জায়েজ।

৫. প্রাকাশ্যে যদি কেউ শরীয়তগর্হিত করে, তাহলে তার খারাবী বর্ণনা করা এমন ব্যক্তির কাছে যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সরাসরি বদনাম করা জায়েজ আছে। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।

৬. কারো পরিচয় প্রকাশ করতে। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না। -তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২, সূরা হুজরাত-১২

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • روح المعاني في تفسير القرآن العظيم والسبع المثاني، سورة حجرات, পৃষ্ঠা: ১২

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৭ মে, ২১