খোমেনী ও শিয়া ইছনা আশারিয়া

ইসলামী জিন্দেগীবিবিধ২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

আমি শুনেছি ইরান বিপ্লবের রাহবার আয়াতুল্লাহ খোমেনী ও তার দল ইছনা আশারিয়া সম্প্রদায় নাকি কাফের, তারা নাকি হযরত আলীকে শেষ নবী মনে করেন ? তাদের নাকি অনেক কুফরী আকীদা রয়েছে, এসব কথা কতটুকু বাস্তব ?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা “খোমেনী” শিয়া ইমামিয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম শাখা দল ইছনা আশারিয়া এর একজন উচ্চ পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা। খোমেনী ও তার ইছনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের অনেক কুফরী আকীদা রয়েছে। তবে আলী e কে সরাসরি শেষ নবী মনে করার আকীদা শিয়াদের অপর একটি দলের, যারা আলাবিইয়্যাহ নামে পরিচিত। খোমেনী গ্রুপ অবশ্য এ আকীদা পোষণ করে না। আলমিলাল ওয়ান নিহাল নামক গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৫৬ পৃষ্ঠায় আলবাহাইয়্যাহ সম্প্রদায়ের এ আকীদার কথা উল্লেখ আছে।

খোমেনী ও ইছনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের কিছু গোমরাহ ও কুফরী আকীদা নিম্নে উল্লেখ করা হলো

১. এ সম্প্রদায়ের ভিত্তি হলো ইমামতের আকীদার উপর। ইমামগণ সম্পর্কে খোমেনী লিখেছেন যে, আমাদের ইমামগণের এমন মর্তবা ও পজিশন অর্জিত আছে, যে পর্যন্ত কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতা ও নবী-রাসূলগণও পৌছতে পারেন না। -আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়া ৫২

উক্ত গ্রন্থের অন্য স্থানে লিখেছে যে, সৃষ্টিজগতের প্রতিটি কণার উপর ইমামগণের আধিপত্য রয়েছে। (প্রাগুক্ত)

২. হযরত শাইখাইন অর্থাৎ আবূ বকর ও উমর e এবং যিননুরাইন হযরত উসমান e এবং অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে খোমেনীর মন্তব্য হচ্ছে- আবূ বকর, উমর আন্তরিক ভাবে মুসলমান ছিলেন না। রাজত্ব ও ক্ষমতা লাভের আশায় কেবল বাহ্যত ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ উদ্দেশ্য সফল না হলে তারা ইসলামের বিরুদ্ধেই দল তৈরি করে ফেলতেন। এবং ইসলামের শত্রু হয়েই মাঠে নামতেন। -কাশফুল আসরার ১১৩/১১৪

তার মতে আবূ বকর, উমর কুরআনের বহু আয়াতের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন এবং নিজেদের পক্ষ থেকে হাদীস বানিয়ে বর্ণনা করেছেন। -কাশফুল আসরার ১১৩/১১৪

সে হযরত উসমান e এবং মুয়াবিয়া e কে যালিম ও দুশ্চরিত্র বলে আখ্যা দিয়েছে।

৩. শিয়াদের একজন ইমাম উচ্চ পর্যায়ের মুজতাহিদ বাকের মজলিসী, যার পুস্তকসমূহ পাঠ করতে স্বয়ং খোমেনী কাশফুল আসরারের ১২১ পৃষ্ঠায় পাঠকগণকে অনুরোধ জানিয়েছেন। এই মজলিসী নিজ কিতাবে লিখেছে যে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা ও হাফসা মুরতাদ এবং তারা দুজনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষপানে শহীদ করেন। -হায়াতুল কুলূব ৭৪৫

বাকের মজলিসীর মতে তিনজন ব্যতীত সকল সাহাবা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন। সে তিনজন হলেন, সালমান ফারসী, মিকদাদ ও আবূ যর। -হায়াতুল কুলূব ২ঃ ৮৩৭

৪. শিয়া ইছনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের বহু কুফরী আকিদার মধ্যে একটি হচ্ছে-কুরআন পরিবর্তনের আকিদা। বাকের মজলিসী (যার কিতাব পাঠের জন্য খোমেনী অনুরোধ জানিয়েছে) নিজ গ্রন্থে লিখেছে যে, কুরআনে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত দুই হাজারেরও বেশী রেওয়ায়েত রয়েছে, সেগুলো মশহুর পর্যায়ের। -ফসলুল খেতাব ২২৭

খোমেনী ও তার ইছনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের এ সকল ভ্রান্ত আকীদার মাধ্যমে কুরআনের বহু আয়াত ও হাদীসে মুতাওয়াতিরকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা হয়েছে। একারণে প্রত্যেক যুগের উলামায়ে কিরামগণ শিয়া ইছনা আশারিয়া ফেরকাকে কাফির বলে ফাতাওয়া দিয়েছেন। যেমন- ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী, কাজী ইয়াজ মালেকী, বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী, কামাল ইবনে হুমাম হানাফী, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী, শাহওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহলবী এবং মুফতী মাহমূদ দেওবন্দী i প্রমূখ উল্লেখযোগ্য।

মোটকথা খোমেনী ও ইছনা আশারিয়া উল্লেখিত বাতিল আকীদাসমূহের কারণে কুরআন, হাদীস ও ইজমায়ে উম্মাতের দৃষ্টিতে ইছনা আশারিয়া সম্প্রদায় ইসলাম থেকে খারিজ এবং ইরানের বিপ্লব কোন ইসলামী বিপ্লব নয়। বরং সেটা নির্ভেজাল শিয়া বিপ্লব।

আমরা তাদের ভ্রান্ত আকিদাসমূহ হতে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি আকীদা উল্লেখ করেছি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন হেদায়াতুশ শিয়া, লেখকঃ রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ.

ইরানী ইনকেলাব ইমাম খোমেনী ও শিয়া মতবাদ, লেখকঃ আল্লামা মনযূর নোমানী। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কর্তৃক অনুদিত।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • ফাতাওয়া শামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৭৮
  • ফাতহুল কাদীর, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩০৪
  • ফাতাওয়া আলমগীরী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৬৪
  • আল ফছল লি-ইবনে হাযাম, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৭৮
  • জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, লেখকঃ মুফতী আব্দুস সালাম সাহেব চাটগামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৬৮

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১