কসম করার পর তা ভেঙ্গে ফেললে কাফফারা কিভাবে আদায় করবে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসকসম-মান্নত১৩ মে, ২১

প্রশ্ন

কেউ যদি বলে, আমি আল্লাহর কছমদিয়ে বলছি, আল্লাহর কছমদিয়ে বলছি, আল্লাহর কছমদিয়ে বলছি আমি আর তোমার সাথে দ্বিন(ইসলাম) নিয়ে কোন কথা বলব না। কিন্তু ঐদিন দ্বিন(ইসলাম) এর কথা বলেছে, এখন কী কাফফারা দিতে হবে? এখন কাফফারা দিতেহলে কী পরিমাণ পণ্য/ টাকা?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা কসম হয়ে গেছে। সুতরাং সেই কসম ভঙ্গ করার কারণে কাফফারা দিতে হবে। আর এমন অযথা কসম করা কিছুতেই উচিত নয়। ইসলামের কথা আরেক ভাইয়ের সাথে বলবে না, তো কার সাথে বলবে?

কসমের কাফফারাঃ

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ • আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। -সূরা মায়িদা-৮৯

উক্ত আয়াতের আলোকে কসমের কাফফারা হল- ব্যক্তি তার পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরণের যে খাবার গ্রহণ করে এমন খাবার দশজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দিয়ে দিবে। যা সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা একদিন খরচ ধরা হবে। সেই হিসেবে সদকায়ে ফিতর পরিমাণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যত টাকা হয়, তাই হবে কসমের কাফফারা।

যেমন গত রোযায় সদকায়ে ফিতির ছিল ৬০ টাকা। তো সেই হিসেবে ৬০০( ছয় শত টাকা) হবে কসমের কাফফারা। এটি বর্তমান মূল্য হিসেবে ধরা হয়েছে। আগে পরে পরিবর্তিত হতে পারে। যে ব্যক্তি এর সামর্থ রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। আরেকটি বিষয়, এমন অযথা কসম করলে উক্ত কসম ভেঙ্গে ফেলাই শরীয়তের বিধান।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– « مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِى هُوَ خَيْرٌ وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ • হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর কসম খায়, তারপর এর বিপরীত কাজে কল্যাণ দেখে, তাহলে সে যেন উক্ত কল্যাণধর্মী কাজটি করে এবং স্বীয় কসমের কাফফারা প্রদান করে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৪,৩৬২
  • সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং: ৪,৩৪৭
  • সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং: ৪,৩৫২
  • মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং: ৫,৯৩১
  • মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং: ১৮,২৫১
  • মুসনাদে ইবনুফ জিদ, হাদীস নং: ১৩৬
  • মুসনাদে তায়ারিসী, হাদীস নং: ১,৩৭০
  • মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং: ১,৪৫৭
  • সুনানে দারেমী, হাদীস নং: ২,৩৪৫
  • সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং: ৪,৭২৭
  • সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং: ১৮,৬৩৪
  • সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ২,১০৮
  • মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং: ৫১৬
  • সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৬,২৪৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৩ মে, ২১