করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন অবস্থায় জুমআ ও যোহর আদায় সম্পর্কে যা জানা জরুরী

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসমসজিদ-মাদ্রাসার বিধান৬ এপ্রিল, ২১

প্রশ্ন

১. যে এলাকায় জুমআ পড়া আবশ্যক নয়, এমন এলাকায় যোহরের নামায জামাতের সাথে আদায় করা যাবে কি?

২. যে এলাকায় জুমআ পড়া আবশ্যক। কিন্তু কোন কারণে জুমআ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন এখন বাংলাদেশে করোনা মহামারীর কারণে জামে মসজিদে দশজনের বেশি জুমআ জামাতে অংশগ্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যারা জুমআ আদায় করতে পারছেন না, তাদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ করছি।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

যে ব্যক্তি এমন এলাকায় বসবাস করে, যেখানে জুমআ পড়া আবশ্যক নয়, এমন স্থানে আজান ও ইকামতসহ জামাআতের সাথে জোহর আদায় করবে। কিন্তু যাদের উপর জুমআ পড়া আবশ্যক। আবার উক্ত এলাকায় জুমআ আদায়ের যাবতীয় শর্ত পাওয়া যায় এবং উক্ত এলাকায় জুমআ আদায়ও করা হয়। কিন্তু কতিপয় লোক কোন উজরের কারণে জুমআয় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তাদের জন্য জামাতের সাথে যোহর আদায় করা মাকরূহ হবে। তাই জামাত ছাড়া আলাদা আলাদাভাবে যোহরের নামায আদায় করে নিবে। যেমন বাংলাদেশে জুমআর নামায পড়া জায়েজ হলেও লকডাউনের কারণে মসজিদে জুমআর জামাতে অনেকে শরীক হতে পারছেন না। এমতাবস্থায় যারা জুমআ নামাযে শরীক হতে পারছেন না, বা অন্যত্র জুমআ আদায় করতে পারছেন না, তাদের জন্য যোহরের নামায জামাতে পড়া মাকরূহে তাহরীমী হবে। তাই যোহরের নামায জামাত ব্যতীত একাকী আদায় করাই বাঞ্ছনীয়। সেই সাথে যোহরের নামায জুমআ হবার পর আদায় করাই উত্তম। তবে সময় হতেই আদায় করে ফেললেও আদায় হয়ে যাবে।

তবে শহরের অধিবাসী যারা মা’জূর নয়, কিন্তু তারা অলসতাবশতঃ জুমআ আদায় করেনি। তাদের জন্য জুমআর নামায আদায় হয়ে যাবার পর যোহরের জামাত করাও মাকরূহ। তবে তা মাকরূহে তাহরীমী নয়, বরং মাকরূহে তানযীহী। তাই এক্ষেত্রেও একাকী যোহর পড়াই উচিত।

আমাদের পরামর্শ যেহেতু জামে মসজিদগুলোত সরকারী নির্দেশনা মোতাবিক দশজনের বেশি মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তা’ই যেসব এলাকায় জুমআ আদায় করা জায়েজ, সেই সকল এলাকার পাঞ্জেগানা মসজিদ বা বাড়ি ঘরের আঙ্গিনা, উঠুন, ছাদ বা মাঠে সুস্থ্য ব্যক্তিদের নিয়ে জুমআ আদায়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এর জন্য শর্ত হল, আগেই সকলকে জানাতে হব যে, এখানে জুমআ হবে অর্থাৎ ইজনে আমের শর্তটি পাওয়া যেতে হবে। সেই সাথে আজান ইকামত, খুতবা এবং ইমাম ব্যতীত তিনজন মুসল্লী থাকা আবশ্যক। তবে এক্ষেত্রেও

১. সরকারী নির্দেশনা ফলো করে অসুস্থ্য ও বয়স্কদের এবং করোনায় আক্রান্ত হবার শংকা আছে এমন ব্যক্তিদের জুমআ অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

২. সেই সাথে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক দূরত্ব যথাসম্ভব রক্ষা করতে হবে।

৩. যাদের ঠান্ডা কাশি রয়েছে তারাও জুমআয় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।

৪. নামাযের আদায়ের স্থানটি সম্ভব হলে স্যানিটারাইজ করতে হবে।

৫. খুতবা ও নামায সংক্ষেপে শেষ করতে হবে।

৬. নামাযের আগের দীর্ঘ বাংলা বয়ান পরিহার করতে হবে।

৭. গা ঘেঁষে না দাঁড়িয়ে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে কাতারে দাঁড়াতে হবে।।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • المحيط البرهانى فى فقه النعمانى, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৯২
  • الفتاوى الهندية, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৪৫
  • درر الحكام شرح غرر الأحكام, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৩৯
  • البحر الرائق شرح كنز الدقائق, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৬৬
  • حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح, পৃষ্ঠা: ২০০
  • الدر المختار مع رد المحتار, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৩

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৬ এপ্রিল, ২১