কবরের উপর মসজিদ নির্মাণের হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসমসজিদ-মাদ্রাসার বিধান১২ মে, ২১

প্রশ্ন

১. শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ওয়াকফ সহিহ বা বৈধ হওয়ার জন্য মৌখিক ওয়াক্ফই যথেষ্ট নাকি রেজিষ্ট্রি করা জরুরি?

২. যদি কোরআন এবং হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে আবার মসজিদ এবং কবরস্থানের সমস্ত জায়গা শুধূ মসজিদ বরাবর সরকারী আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের লিখিত দলিল করে দেওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে মসজিদের পাশে যে অনেক ফাকা জায়গা পড়ে রয়েছে সে জায়গাটুকুও মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করা, অথচ সেই জায়গায় মসজিদ না করে কবরস্থানের উপর আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মসজিদ তৈরী করেছি এবং নামাজ পড়ছি এখন সেই মসজিদে নামাজ পড়লে নামাজের সঠিক হক আদায় হবে কিনা?

৩. আর মসজিদ তৈরীর সময় ঐ সমস্ত সকল কবরগুলো খনন না করে, শুধু মাত্র পিলার করার জন্য যে জায়গাটুকু খনন করার দরকার সেই জায়গাটুকু খনন করেছি এবং সেখানকার যে হাড়-হাড্ডি গুলো পাওয়া গেছে সে হাড়-হাড্ডি গুল্ওো অন্য জায়গা না সড়িয়ে সেই কবরের মধ্যেই তার মানে মসজিদের নিচে চাপা দিয়েছি আর বাঁকি শত শত কবরগুলো কবরগুলো ঐ অবস্থাতেই রেখে দিয়ে সমস্ত কবরগুলো গোটা মসজিদের মেঝের নিচে চাপা দিয়ে মসজিদ করেছি এবং এতদিন ধরে এই ভাবেই সেই মসজিদে আমরা নামাজও পড়ছি এখন আমাদের নামাজ হবে কিনা?

৪. আর যদি গ্রামের সকল জনগন একমত হয়ে মসজিদের মেঝ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে ঐ সকল কবরের হাড়-হাড্ডি তুলে ফেলে অন্য কবরস্থানে দাফন করে তারপর নতুন করে মেঝে তৈরী করে নামাজ পড়ি তাহলে সে কাজটি করা উত্তম হবে কি না?

৫. আর যদি আমরা হাড়-হাড্ডি না তুলে ঐ অবস্থাতেই নামাজ পড়ি এবং এ রকম অবস্থায় মসজিদ করে নামাজ পড়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিলকুল জায়েজ কিনা?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

১. ওয়াকফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য লিখিত দেয়া বা রেজিষ্ট্রি করে দেয়া শর্ত নয়। শুধুমাত্র মৌখিক হুকুম দিয়ে জমিটি ওয়াকফকৃত প্রয়োজনে আলাদা করে দিলেই ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে যায়। সেই হিসেবে মরহুম মেছের জোয়াদ্দার সাহেব মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য আলাদা আলাদা দু’টি জমি ওয়াকফ করার কথা বলে পৃথক করে দেয়ার দ্বারাই ওয়াকফ শুদ্ধ হয়ে গেছে। উক্ত দু’টি নির্ধারিত স্থানে মসজিদ ও কবরস্থানের কাজ সমাপনের দ্বারা ওয়াকফটি আরো শক্তিশালী ও পূর্ণতা লাভ করেছে। পরবর্তীতে ওয়াকফকারীর ওয়ারিসদের কোন অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করার। -বাহ্‌রুর রায়েক, ৫/১৮৮; ফাতহুল ক্বাদীর, ৬/২৩৪

২. ৩. ৫. ওয়াকফকারী যে স্থানকে কবরস্থান হিসেবে ওয়াকফ করে গেছে, সেটিতে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ নয়। ওয়াকফকারীর ওয়াকফের বিপরীত করে কবরস্থানের স্থলে মসজিদ নির্মাণ করাটি শরীয়ত গর্হিত কাজ হয়েছে। দেশীয় আইনের ফাঁক গলে এহেন কাজ করা কিছুতেই সমীচিন হয়নি। মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থানে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। আর কবরস্থানটিকে কবরস্থান হিসেবেই রাখতে হবে। এর উল্টো করা জায়েজ নয়। শরয়ী বিধানের উল্টো কবরস্থানের জন্য ওয়াকফকৃত জমিনে মসজিদ নির্মাণের ফলে কর্তৃপক্ষ শক্ত গোনাহগার হয়েছে। -রদ্দুল মুহ্‌তার, ৬/৬৪৯; বাহ্‌রুর রায়েক, ৫/২৪৫; নাহরুল ফায়েক, ৩/৩২৬হ্যাঁ, কবরস্থানের স্থলে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ আছে ২টি শর্তে। যথা-১. যদি উক্ত কবরস্থানটি আর কবর দেয়ার কাজে ব্যবহৃত না হয়।২. কবরস্থানে দাফনকৃত লাশ মাটির সাথে মিশে গিয়ে থাকে। যদি উল্লেখিত উভয় শর্ত পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হয়েছে। সুতরাং তাতে নামাযও জায়েজ হচ্ছে। -উমদাতুল ক্বারী, ৩/৪৩৫; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৬৭কিন্তু যদি এই দুই শর্তের একটি শর্তও না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হয়নি। সুতরাং তাতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরিমী হচ্ছে। -রদ্দুল মুহ্‌তার, ৩/১৫৪; তাতারখানিয়া, ২/১৮২

৪. যদি কবরস্থানটি প্রয়োজনীয়তা আর না থাকে। অন্য কবরস্থানেই মানুষ এখন লাশ দাফন করে। ওয়াকফকৃত উক্ত কবরস্থানটি বিরান হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে উক্ত স্থান থেকে কবরের হাড়গোড় উঠিয়ে অন্যত্র সম্মানের সাথে দাফন করে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও হাড়গোড় একদম মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর কাজটি করলেই সর্বোত্তম হবে। আর যদি এখনো উক্ত স্থানে মানুষ লাশ দাফন করে থাকে। তথা কবরস্থানটির প্রয়োজনীয়তা এখনো বাকি থাকে, তাহলে উক্ত স্থানে ওয়াকফকারীর নির্দেশনার উল্টো হওয়ায় মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হবে না। -উমদাতুল ক্বারী, ৩/৪৩৫; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৬৭; রদ্দুল মুহ্‌তার, ৬/৬৪৯; বাহ্‌রুর রায়েক, ৫/২৪৫; নাহরুল ফায়েক, ৩/৩২৬

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ মে, ২১