বর্তমানে আমাদের এখানে কিছু এতায়াতের সাথী প্রচার করছে যে, মাদ্রায় যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না, কারন তারা তা সঠিকভাবে ব্যায় করে না। এছাড়াও যাকাতের টাকা নাকি সরসরি ব্যাক্তির হাতে পৌঁছাতে হবে, না হলে যাকাত আদায় হবে না। আমরা বিগত দিনে মাদ্রাসায় যাকাত প্রদান করেছি, এবারও করার নিয়ত আছে। এমতাবস্থায়, মাদ্রাসায় যাকাত দেয়া যাবে কিনা, দিলে কিভাবে দিতে হবে এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কিভাবে এই টাকা ব্যায় করবেন, সে বিষয়ে একটি দলীল ভিত্তিক ভিডিও দেয়া যায় কি না? বিষয়টি অতীব জরুরী এবং কমপক্ষে রমজানের শুরুতে উত্তর আশা করছি।
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
যাকাতের টাকা হকদারকে মালিক বানিয়ে না দিলে যাকাত আদায় হয় না। একথা সঠিক। কিন্তু একথাও স্মরণ রাখতে হবে এবং জেনে রাখতে হবে যে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এই মাসআলা জানেন। সেই হিসেবেই তারা সঠিক ও যথার্থ পদ্ধতিতেই যাকাত গ্রহণ করে থাকেন। যাতে করে যাকাতদাতাদের যাকাত সঠিকভাবে আদায় হয়। সকল কওমী মাদরাসায় দু’টি ফান্ড থাকে। এক হল, জেনারেল ফান্ড। আরেক হল, লিল্লাহ ফান্ড। লিল্লাহ ফান্ডে যাকাত ও ওয়াজিব সদকার টাকা গ্রহণ করা হয়। তারপর তা গরীব ছাত্রদের জন্য ব্যবহার করা হয়। গরীব ছাত্রদের পক্ষ থেকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ উকালতনামার মাধ্যমে বা মৌখিকভাবে যাকাত গ্রহণে উকীল হয়ে থাকেন। ফলে মাদরাসার লিল্লাহ ফান্ডে যাকাত ও সদকায়ে ওয়াজিবা দান করলে কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করার দ্বারাই যাকাত ও সদকায় আদায় হয়ে যায়। যেমন আমাদের মাদরাসা ‘তা’লীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা’ এ যেসব ছাত্র ভর্তি হন, তাদের মাঝে যারা মাদরাসার নির্ধারিত মাসিক প্রদেয় দিতে সক্ষম নন, তারা বছরের শুরুতে একটি উকালতনামা লিখেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে। যাতে লিখা থাকে যে, উক্ত ছাত্রটি গরীব হবার কারণে মাদরাসার নির্ধারিত প্রদেয় প্রদান করতে সক্ষম নয়। তাই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যেন যাকাত কালেকশন করে উক্ত ব্যয়ভার বহন করে এজন্য কর্তৃপক্ষকে ছাত্রটি উকীল নিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ উক্ত ছাত্রটির বাৎসরিক খরচ যাকাত ফান্ড থেকে গ্রহণের অধিকার লাভ করে। ফলে মাদরাসায় যখনি কেউ যাকাত প্রদান করে,তখন কর্তৃপক্ষ গরীব ছাত্রদের উকীল হিসেবে টাকা গ্রহণ করে মাদরাসায় জমা দেবার মাধ্যমেই যাকাতদাতার যাকাত আদায় হয়ে যাচ্ছে। মাদরাসায় যাকাত প্রদান করলে দুই সওয়াব পাবার আশা করা যায়। এক হল, সঠিক হকদারের কাছে পৌঁছে যায়। দ্বিতীয়ত দ্বীনী শিক্ষার প্রসারে সহযোগিতার সওয়াব। সুতরাং মাদরাসার দুশমন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। মাদরাসার গোরাবা/লিল্লাহ ফান্ডে যাকাত প্রদান করে সঠিক হকদারের কাছে যাকাত প্রদান এবং দ্বীনী শিক্ষা বিস্তারে সহযোগী হন। إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন -সূরা তওবা, ৬০।
- والله اعلم باالصواب -