একাধিক রোযার কাফফারা কয়টি আদায় করতে হয়

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসরোজা১২ জানু, ২২

প্রশ্ন

(১) একাধিক রমযানের একাধিক কাযার ক্ষেত্রে ১টি কাফ্ফারাই কি যথেষ্ট? নাকি উপরের শ্রেণিবিন্যাসের নিমিত্ত ২ হুকুম সাব্যাস্ত হবে? (২) উপরে মাওলানা সাহেব তো বললেন, সহবাসের কারণে হলে সহবাস জনিত প্রতিটি রোযা ভাঙ্গার কারণে আলাদা করে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে, তাহলে কেউ যদি সহবাস না করে পর্ণোগ্রাফী ভিডিও দেখে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে তার বীর্য স্খলিত হয়ে যায় তাহলে উপরে বর্ণিত ২ শ্রেণীর কোন্ শ্রেণীর আওতায় পড়বে? অর্থাৎ, পানাহার জাতীয় রোযা ভঙ্গের আচরণের শ্রেণীতে পড়বে নাকি প্রবৃত্তির চরিতার্থ জাতীয় রোযা ভঙ্গের আচরণের শ্রেণীতেপড়বে? যেহেতু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, পানাহার জাতীয় রোযা ভঙ্গের একাধিক কাযার জন্য ১টি কাফ্ফারা আদায় করতে হবে আর সহবাসের কারণে রোযা ভঙ্গের জন্য একাধিক কাযার জন্য তদানুযায়ী একাধিক কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। বিঃদ্রঃ প্রথমে মাফ চেয়ে নিচ্ছি এমন কিছু শব্দ প্রশ্নে প্রয়োগ করেছি যা সাধারণত ওলামাদের সামনে উচ্চারণ করা বেয়াদবীর শামিল। কারণ ফোনে বা সরাসরি এসব কথা বলতে লজ্জ্বা লাগে ও বলাও যায় না। তাই লিখনীর মাঝে আপনাদের কাছে প্রকাশ করলাম। মাসআলা জানা হয়ে যাবে আর পরিচয় ও প্রকাশ পাবে না। আর উপরে বর্ণিত সূরতের সাথে বর্তমানে

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

মাসায়েল জানতে লজ্জার কিছু নেই। যাদের নাম প্রকাশে অনীহা আছে আমরা তাদের নাম আমাদের সাইটে প্রকাশ করি না। মাসআলা জেনে শরীয়তের উপর আমল করা মাকসাদ। নাম প্রকাশ করে কাউকে খাট করা উদ্দেশ্য নয়। যেহেতু আপনার প্রশ্নটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তাই নাম প্রকাশ না করে আপনার প্রশ্নের উত্তরটি সাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের যেকোন ধরণের সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আমাদের কাছে নিঃসংকোচে প্রশ্ন করতে পারেন। এবার প্রশ্নটির উত্তর খেয়াল করুন- একাধিক রোযার কাফফারা কয়টি আদায় করতে হয়? মৌলিকভাবে উক্ত মাসআলায় মতভেদ আছে। এ ব্যাপারে মোট তিনটি বক্তব্য ফুক্বাহায়ে কেরাম থেকে পাওয়া যায়। যথা- ১– একাধিক রমজানের কাযা হোক বা এক রমজানের একাধিক রোযার কাযা হোক, চাই সহবাসের কারণে রোযা ভঙ্গ করা হোক বা অন্য কোন কারণে রোযা ভঙ্গ করা হোক সর্বাবস্থায় যদি কোন একটির কাফফারা আদায় করার আগেই আবার রোযা ভঙ্গ করা হয়, তাহলে একটি কাফফারাই যথেষ্ঠ হয়ে যাবে। একাধিক রোযার জন্য বা একাধিক রমজান মাসের রোযার জন্য বা সহবাস বা সহবাস ছাড়া রোযা ভঙ্গের জন্য আলাদা আলাদা কাফফারা আদায় করতে হবে না। বরং একটি কাফফারাই যথেষ্ট হবে। উদাহরণতঃ এক ব্যক্তি ২০১২ সালে রমজান মাসে দুইটি রোযা ভঙ্গ করল সহবাস করে, তারপর দ্ইুটি রোযা ভঙ্গ করল পানাহার করে। তারপর রমজান মাস শেষে কাফফারা আদায় করেনি। তারপর ২০১৩ সালের রমজান এসে গেল। এ রমজানেও সে দ্ইুটি রোযা ভঙ্গ করল সহবাস করে। তারপর আরো দুটি রোযা ভঙ্গ করল পানাহার করে। তাহলে রমজান শেষে যদি লোকটি উভয় রমজানের রোযার কাফফারা আদায় করতে চায়, তাহলে একটি কাফফারা আদায় করলেই উভয় রমজানের ভঙ্গ করা রোযার কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। দুই রমজানের জন্য দুইটি কাফফারা আদায় করা জরুরী নয়। সহবাসের দ্বারা ভঙ্গ করা রোযার কাফফারাও আলাদা আলাদা একাধিকবার আদায় করার প্রয়োজন নেই। এক কাফফারাই যথেষ্ট হয়ে যাবে। ২– এক রমজানের একাধিক রোযা ভঙ্গের জন্য এক কাফফারাই যথেষ্ট। তাই তা যে কারণেই ভঙ্গ করা হোক না কেন। চাই সহবাসের জন্য বা পানাহারের জন্য। সর্বক্ষেত্রেই এক কাফফারাই সকল রোযার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। তবে একাধিক রমজানের রোযা ভঙ্গের জন্য একাধিক কাফফারা আদায় করতে হবে। এক কাফফারা যথেষ্ট হবে না। যেমন ২০১২ সালের রমজানে দুই রোযা ভঙ্গ করা হল সহবাস করে। আবার দুই রোযা ভঙ্গ করা হল পানাহার করে, তারপর রমজান শেষে এসব রোযার কাফফারা আদায় করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের রমজানেও দুই রোযা ভঙ্গ করা হল সহবাস করে, আবার দুই রোযা ভঙ্গ করা হল পানাহার করে। তাহলে কয়টি কাফফারা আদায় করতে হবে? দুইটি কাফফারা। ২০১২ সালের রমজানের রোযা ভঙ্গের একটি কাফফারা। আর ২০১৩ সালের রমজানের রোযা ভঙ্গের জন্য একটি কাফফারা। এই মোট দুইটি কাফফারা আদায় করতে হবে। তাহলে কী দাঁড়াল? এ দ্বিতীয় বক্তব্য অনুপাতে এক রমজানে যে কারণেই হোক একাধিক রোযা ভঙ্গ হলে একটি কাফফারা আদায় করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য রমজানের জন্য যথেষ্ট হবে না এক কাফফারা। বরং প্রতিটি রমজানের জন্য আলাদা কাফফারা আদায় করা জরুরী। সহবাসের কারণে ভঙ্গ হওয়া না হওয়ার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। ৩– সহবাস ছাড়া অন্য কারণে যদি রোযা ভঙ্গ করে থাকে, তাহলে একাধিক রমজানের একাধিক রোযার জন্যও এক কাফফারাই যথেষ্ট। কিন্তু সহবাসের কারণে রোযা ভঙ্গ করলে প্রত্যেক রোযার জন্য আলাদা কাফফারা আদায় করতে হবে। অর্থাৎ এক রমজানে যদি একাধিকবার সহবাস করে রোযা ভঙ্গ করে, তাহলে প্রতিটি রোযা ভঙ্গের জন্য আলাদা কাফফারা আদায় করতে হবে। তেমনি অন্য রমজানের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। তথা প্রত্যেক ঐ রোযা যেটি সহবাস করে ভঙ্গ করা হয়েছে, তার প্রতিটির জন্য আলাদা কাফফারা আদায় করা জরুরী। এক কাফফারা যথেষ্ট হবে না। উদাহরণতঃ এক ব্যক্তি ২০১২ সালের রমজান মাসে দুইটি রোজা ভঙ্গ করল পানাহার করে। তারপর রমজান শেষে উক্ত রোযার কাফফারা আদায় করেনি। তারপর ২০১৩ সালের রমজানে এসে আরো দুটি রোযা ভঙ্গ করল। তাহলে রমজান শেষে তার উপর কয়টি কাফফারা আবশ্যক হবে? একটি কাফফারা। যেহেতু সহবাস ছাড়া অন্য কারণে রোযা ভঙ্গ হয়েছে, তাই এক কাফফারাই একাধিক রোযা ও একাধিক রমজানের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি ২০১২ সালের রমজানে দুইটি রোযা ভঙ্গ করে সহবাস করে, তারপর রমজান শেষে কাফফারা আদায় করেনি। তারপর আবার ২০১৩ সালের রমজানে এসে আরো দুইটি রোযা ভঙ্গ করে সহবাস করে, তাহলে তার উপর কয়টি কাফফারা আবশ্যক হবে? চারটি কাফফারা। ২০১২ সালের দুই রোযার জন্য দুই কাফফারা। ২০১৩ সালের দুই রোযার জন্য দুই কাফফারা। এই মোট চার কাফফারা আবশ্যক লোকটির উপর। যেহেতু সহবাসের জন্য রোযা ভঙ্গের কাফফারা একটি অন্যটির মাঝে তাদাখুল হয় না। তাই প্রতিটি রোযা ভঙ্গের জন্য আলাদা কাফফারা আবশ্যক হবে। এই হল তিনটি বক্তব্য রমজানে রোযা ভঙ্গের কাফফারার ক্ষেত্রে। এ কারণেই মুফতীয়ানে কেরামের ফাতওয়ার মাঝে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। কেউ প্রথম বক্তব্য অনুসরণ করে বলে থাকেন, একাধিক রোযার একাধিক রোযার ক্ষেত্রে চাই তা সহবাসের কারণে ভঙ্গ করুক বা পানাহার করে ভঙ্গ করুক একটি কাফফারা আদায় করলেই চলবে। একাধিক কাফফারা লাগবে না। কোন কোন মুফতী সাহেব দ্বিতীয় বক্তব্য অনুপাতে বলে থাকেন যে, এক রমজানের একাধিক রোযা ভঙ্গের জন্য একটি কাফফারা আদায় করলেই হবে সহবাসের কারণে ভঙ্গ করুক বা পানাহার করে ভঙ্গ করুক। আর একাধিক রমজানের রোযা ভঙ্গের জন্য একাধিক কাফফারা আদায় করতে হবে। যে কারণেই রোযা ভঙ্গ করা হোক না কেন। আবার আরেক দল মুফতীয়ানে কেরাম তৃতীয় বক্তব্য অনুপাতে একথা বলেন যে, সহবাসের মাধ্যমে রোযা ভাঙ্গলে একাধিক রোযা ভঙ্গের জন্য একাধিক কাফফারা আদায়ের কথা বলে থাকেন। আর সহবাস ছাড়া পানাহারের কারণে রোযা ভঙ্গকারীর ক্ষেত্রে একাধিক রমজানের একাধিক রোযা বা এক রমজানের একাধিক রোযা ভঙ্গের জন্য এক কাফফারা আদায়কেই যথেষ্ট বলে থাকেন। সমাধান কি? এক্ষেত্রে আসলে চূড়ান্ত সমাধান বলা দুস্কর। আকাবীর মুফতীয়ানে কেরাম থেকে একাধিক ফাতাওয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে হাকীমুল উম্মত আশরাফী থানবী i এর ফাতাওয়া গ্রন্থ ইমদাদুল ফাতাওয়ার টিকায় মুফতী যফর আহমাদ উসমানী i একটি মধ্যপন্থী সমাধান দিয়েছেন। যাতে তিনটি মতেরই সন্নিবেশন রয়েছে। সেটিই আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে, আমরাও এমতটিকে প্রাধান্য দিতে পারি- তিনি বলেন, “সহবাস ছাড়া অন্য কারণে রোযা ভঙ্গ করলে এক রমজানের একাধিক রোযা ভঙ্গের জন্য যেমন একটি কাফফারা যথেষ্ট। তেমনি একাধিক রমজানের একাধিক রোযা ভঙ্গের জন্যও একটি কাফফারাই যথেষ্ট হবে। একাধিক কাফফারা আদায় করা জরুরী নয়। কিন্তু যদি সহবাসের দ্বারা রোযা ভঙ্গ করে থাকে, তাহলে এক রমজানে যদি একাধিক রোযা ভঙ্গ করে থাকে সহবাস করে তাহলে এক কাফফারা আদায় করলেই সকল রোযা ভঙ্গের কাফফারা হয়ে যাবে। একাধিক আদায় করা জরুরী নয়। কিন্তু যদি দুই রমজানে সহবাসের দ্বারা রোযা ভঙ্গ করে থাকে, তাহলে দুই রমজানের জন্য আলাদা দুইটি কাফফারা আদায় করতে হবে। এক কাফফারা আদায় যথেষ্ট হবে না”। ولو تكرر فطره ولم يكفر للأول يكفيه واحدة ولو في رمضانين عند محمد وعليه الاعتماد بزازية ومجتبى وغيرهما واختار بعضهم للفتوى أن الفطر بغير الجماع تداخل وإلا لا (رد المحتار، كتاب الصوم، مطلب فى الكفارة-3/391، مراقى الفلاح، فصل فى الكفارة-552، البحر الرائق-2/277) বিস্তারিত জানতে পড়–ন-

1. ইমদাদুল ফাতাওয়া-২/১৩৪-১৩৬।

2. ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-১৫-২০৫-২০৬।

3. ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-৬/৪৫৩-৪৫৫।

4. আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল-৩/২২৬-২২৭।

5. ফাতাওয়া হক্কানিয়া-৪/১৮০। সহবাস ছাড়া অন্য উপায়ে বীর্যপাত হলে কাফফারা আবশ্যক কি? রমজান মাসে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা ছাড়া অন্য উপায়ে বীর্যপাত করলে, বা হস্তমৈথুনের ফলে বীর্যপাত হলে বা অন্য যেকোনভাবে বীর্যপাত করার দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। সেই রোযার কাযা আদায় করা আবশ্যক। কিন্তু কাফফারা আবশ্যক হয় না। সুতরাং পর্ণগ্রাফী দেখার দ্বারা উত্তেজনাবশতঃ বীর্যপাত হলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত রোযার কাযা আদায় করা আবশ্যক। কিন্তু কাফফারা আবশ্যক হবে না। (ফাতওয়ায়ে শামী : ৩য় খন্ড,৩৭৮পৃ:) বিঃদ্রঃ হস্তমৈথুন করা হারাম। অশ্লীল ফিল্ম দেখা জায়েজ নয়। তাই এ জঘন্য হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। “أو” أنزل “بتفخيذ أو بتبطين” أو عبث بالكف “أو” أنزل من “قبلة أو لمس” لا كفارة عليه (طحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصوم، باب ما يفسد الصوم ويوجب القضاء، مطبوعة مصرى-557، 109، هداية مع فتح القدير، كتاب الصوم، باب ما يوجب القضاء والكفارة، مطبوعة دار الفكر بيروت-2/331، الفتاوى الهندية، كتاب الصوم، الباب الرابع فيما يفسد وما لا يفسد-1/204)

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ জানু, ২২