আমি বেতন পাই ২৫,০০০/= টাকা। বাবা/মার কাছে থাকি আমার কোন খরচ বহন করতে হয় না। তবে যা ইনকাম ২৫,০০০/= আমার এক মেয়ে তার পড়াশোনা আর স্ত্রীর খরচে ব্যয় হয়। বাবার সামর্থ আছে বলে বাবাই আমাদের থাকা ও খাওয়ার খরচ চালিয়ে নেয়। কোন দাবী করে না। আমার বর্তমানে ২০ ভরি গহনা আছে – যা দীর্ঘ ১০ বছরে জমানো। বিয়ের সময় (বাবা/মা ও শ্বসুর বাড়ি) থেকে মোট ১৩ ভরি গহনা দেয় উভয় পক্ষ মিলে এবং বাকী ৭ ভরি আমি দীর্ঘ ৯ বছরে বানিয়েছি। বর্তমানে আমার বাবা ও আমার বড় মামা (বিদেশ থাকে) তারা দুজনে মিলে আমাকে ১০ লাখ টাকা দেয় এবং আমার জমাকৃত ৫ লাখ টাকা ছিল – মোট ১৫লাখ টাকা দিয়ে আমি একটি ফ্লাট বুকিং দিয়েছি। ফ্লাটের মূল্য ৩৩ লাখ টাকা। বাকী টাকা আমি কিস্তিতে ৩০,০০০/= টাকা মাসে মাসে পরিশোধ করতেছি। মোট ২১ লাখ দেওয়া হয়েছে, বাকী ১২ লাখ আমার কাছে ফ্লাটের মালিক পাবে যা আরো ২ বছর কিস্তি চালাতে হবে ৩০,০০০/= টাকা করে। কিস্তির টাকা আমার বাবা ও মামা মিলে ২০,০০০/= করে মাসে আমাকে দেয় আর বাকী ১০,০০০/= হাজার টাকা আমি আমার বেতন থেকে দেই। এই মোট ৩০,০০০/= টাকা। আমার ১ লাখ টাকার একটা লোন আছে যা আমি ১,০০০/= করে মাসে পরিশোধ করি। মোট ২০,০০০/= পরিশোধ হয়ে গেছে বাকী রয়েছে ৮০,০০০/= (আশি হাজার) টাকা। আমার শেয়ার মার্কেটে ৩ লাখ টাকা ইনভেষ্ট ছিলো। বর্তমানে লস হয়ে ১,৮৫,০০০/= টাকা রয়েছে নগদ বিনিয়োগ রয়েছে ২ বছরে এই টাকা বাড়ছে আবার লসে কমছে। যার কোন নির্দিষ্ট হিসাব নাই। ব্যাংকে আমার স্ত্রীর নামে ৩ লাখ টাকা ফিক্সড করা রয়েছে। এই হলো আমার বিস্তারিত সম্পদ – এখন হুজুর আমার প্রশ্ন উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমার যাকাত কত টাকা হবে এবং এখানে ঋনের জন্য কী কোন মাফ আছে?
সারসংক্ষেপঃ
১. আমি ঋণগ্রস্থ – (ফ্লাটের টাকা পরিশোধ করতে হবে আরো ২বছর)
২. আমার লোন আছে ১ লাখ যা আরো ৩ বছরে পরিশোধ করব।
৩. আমার ইনকাম শুধু মাত্র আমার বেতন ২৫,০০০/=
৪. আর ফ্লাটের কিস্তি ২০,০০০/= টাকা আমার বাবা ও বড় মামা দেয় আমাকে।
৫. ব্যাংকে আমার স্ত্রীর নামে ৩ লাখ টাকা ফিক্সড করা রয়েছে।
৬. আমার ডিপিএস আছে ৩ টা মোট ২,০০০/= করে মাসে ব্যাংকে জমা করি ২ বছর হয়েছে যা অরো ৪ বছর জমা করব। বর্তমানে ডিপিএস ফান্ডে জমা আছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
বিঃ দ্রঃ
১. স্বর্ণের মালিক আমার স্ত্রী – তবে তার কোন আয় নেই আমার আয়ই তার আয়। সে সম্পূর্ন আমার উপর নির্ভর।
২. আমার প্রতি বছর আয় হলো – ৩,০০,০০০/= (তিন লক্ষ টাকা)
৩. ১,০০,০০০/=টাকার ঋণ পরিশোধ করি প্রতি বছর ১২,০০০/= টাকা করে ঋনের কি দেই। আর ফ্লাটের কিস্তি পরিশোধ করি প্রতি বছর – আমার নিজের আয় থেকে বছরে =১,২০,০০০/= টাকা। আর বাবা ও বড় মামা আমাকে দেয় ফ্লাটের সর্বমোট কিস্তি প্রতি মাসে (৩০,০০০/= টাকা) করে অর্থাৎ বাকী টাকা মাসে ২০,০০০/= বছরে তারা দেয় ২,৪০,০০০/= টাকা।
সংক্ষেপে আমার বছরে আয় = ৩,০০,০০০/= আমার নিজের ব্যয় হয় ঋণ পরিশোধ ও কিস্তি বাবদ বছরে= ১,৩২,০০০/= টাকা বাকী ফ্লাটের কিস্তি আমাকে বাবা ও মামা দেয় বছরে = ২,৪০,০০০/= টাকা প্রতি মাসে সব কিস্তি পরিশোধ করে আমার যাবতীয় খরচ বাদে অবশিষ্ট থাকে ১৪,০০০/= (চৌদ্দ হাজার টাকা মাত্র)। সে হিসেবে বছরান্তে আমার আয় হিসেবে অবশিষ্ট থাকে বছরে = ১,৬৮,০০০/= টাকা।
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
উল্লেখিত বিস্তারিত পরিসংখ্যানের আলোকে অনুমান করা যাচ্ছে যে, আপনার স্ত্রীর মালিকানায় রয়েছে প্রায় ২০ভরি স্বর্ণ। সেই সাথে ব্যাংকে রয়েছে ৩ লাখ টাকা। উল্লোখিত সম্পত্তির মালিক আপনার স্ত্রীর হওয়ার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। উক্ত স্বর্ণের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ বা তার বিক্রি করতে গেলে যে বাজার মূল্য আসতো, তা হিসেবে যত টাকা হবে, সে পরিমাণ টাকা এবং ব্যাংকে রাখা টাকার শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।
উদাহরণতঃ ব্যাংকে রাখা তিন লাখ টাকার যাকাত আসবে শতকরা আড়াই টাকা হারে বা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসেবে- ৭৫০০/= (সাত হাজার পাঁচ শত টাকা) আর বাকি স্বর্ণের উপর কত টাকা যাকাত দিতে হবে? তা নির্ণিত করে নিন। এবার খেয়াল করুন আপনার সম্পত্তির বিষয়ে। ব্যাংকে ডিপিএস বাবত আপনার জমা রয়েছে বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা। আর যাবতীয় প্রয়োজনীয় খরচ বাদে ১,৬৮,০০০/= (এক লাখ আটষট্টি হাজার টাকা) এছাড়া শেয়ার মার্কেটে রয়েছে আপনার বর্তমানে ১,৮৫,০০০/= (এক লাখ পঁচাশি হাজার টাকা) তাহলে প্রয়োজন অতিরিক্ত আপনার সম্পত্তি দাঁড়াচ্ছে ৪,০৩,০০০/= (চার লাখ তিন হাজার টাকা) যেহেতু উক্ত সম্পত্তি যাকাতের নিসাব পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাই আপনার উপর প্রতি বছরই যাকাত আদায় করা আবশ্যক। পূর্বের নিয়ম অনুপাতেই শত করা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি এছাড়া আপনার আর কোন সম্পত্তি না থাকে তাহলে উক্ত ৪,০৩,০০০/= তথা চার লাখ তিন হাজার টাকার উপর আড়াই টাকা হারে যাকাত আসছে ১০,০৭৫/= (দশ হাজার পঁচাত্তর টাক)
- والله اعلم باالصواب -