ইসলাম ছাড়া অন্য কোন নামে সংগঠনের নাম রাখা শিরক

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা১২ এপ্রিল, ২৩

প্রশ্ন

ইদানিং শুনতে পাচ্ছি যে, এক ব্যক্তি গবেষনা করে বের করেছেন যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোন নামে সংগঠনের নাম রাখা, বা দলের নাম রাখা নাকি শিরক। লা মাযহাবী বা গায়রে মুকাল্লিদ (যারা আহলে হাদীস বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে) কিছু ভাই বলছেন যে, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী হাম্বলী ইত্যাদি পরিচয় দেয়া, ইসলামী আন্দোলন, হেফাযতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি নাম ধারণ করা নাকি শিরক। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দলের নাম রেখেছেন ইসলাম। তাই আল্লাহর দেয়া এ নাম ছাড়া অন্য কোন নাম রাখা জায়েজ নেই। যদি কেউ রাখে, তাহলে সে শিরক করল।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। -সূরা আম্বিয়া-৭, সূরা নাহল-৪৩ وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا (٤:٨٣) আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত! -সূরা নিসা-৮৩ কুরআন হাদীস রিসার্চ করে হুকুম আরোপিত করে দেয়া সবার কাজ নয়। মুর্খ আর অজ্ঞরা জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করে দ্বীন পালন করবে, আর জ্ঞানীরা গবেষণা করে তার সমাধান বের করে দিবে, এ মূলনীতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে শিখিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হল বর্তমানে কতিপয় ইংরেজী শিক্ষিত দ্বীনের মৌলিকত্ব সম্পর্কে জাহিল আর কতিপয় নামের ডিগ্রিধারী অগভীর জ্ঞানশূণ্য কিছু অর্বাচীন কিছু ইংরেজী আর বাংলা অনুবাদ পড়ে নিজেরা বড় বড় আল্লামা হয়ে যাচ্ছে। কুরআনের আয়াত যারা শুদ্ধ করে পড়তে জানে না, হাদীসের আরবী জের জবর ছাড়া হলে শুদ্ধ করে পড়তে জানে না এমন অতি জ্ঞানীরাও ২৫/২৬ বছরের রিসার্চ প্রচার করে ইসলাম সম্পর্কে বড় বড় বুলি আওরে বেড়াচ্ছে। দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে চলছে বিভ্রান্তির বিষবাষ্প। এরই একটি নজির হল এ অতি পন্ডিতমাখা গবেষণাটি। প্রশ্নে উল্লেখিত বক্তব্যটি শুনতে খুবই দামি ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও মূলত অন্তসারশূণ্য একটি বাচ্চাসূলভ গবেষণার অকাল উদগিরণ। প্রথমে একটি কথা বুঝে নেয়া দরকার। সেটা হল। ইসলাম একমাত্র মনোনিত ধর্ম। ইসলাম ধর্ম ছাড়া বর্তমানে অন্য কোন ধর্মে নাজাত তথা মুক্তি নেই। إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ (٣:١٩) নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। -সূরা আলে ইমরান-১৯ وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ (٣:٨٥) যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত। -সূরা আলে ইমরান-৮৫ ইসলাম শব্দে নাজাত তথা মুক্তি নয়। ইসলাম ধর্মে নাজাত বা মুক্তি নিহিত। আরো স্পষ্ট শব্দে বলতে হয়, ইসলাম শব্দ ধারণের নাম ইসলাম নয়। ইসলাম হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরোপিত ইসলামী বিধান পালনের নাম। একজন খৃষ্টানের নাম ইসলাম রাখলে, হিন্দুর নাম ইসলাম রাখলে, বৌদ্ধের নাম ইসলাম রাখলেই সে মুক্তি পাবে না আখেরাতে। মুক্তি পেতে হলে ঈমান এনে ইসলামের বিধিবিধান মানতে হবে। শুধু ইসলাম শব্দে মুক্তি দিবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলমান দলের নাম রেখেছেন ইসলাম একথা সত্য। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে প্রশ্নোক্ত কথিত গবেষক যে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন সে ব্যাখ্যাটি হাস্যকর। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দলকে ইসলাম নাম দিয়েছেন। সাথে সাথে একথা বলে দেননি যে, ইসলাম ঠিক রেখে আর কোন নাম রাখা যাবে না। এরকম কোন কথা কি কুরআন বা হাদীসে এসেছে? থাকলে উক্ত পন্ডিত গবেষককে উপস্থাপন করতে বলুন। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করা হারাম। এ কথা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দ্রুবসত্য। কিন্তু ইসলাম ছাড়া অন্য কোন নাম ব্যক্তির বা দলের রাখা যাবে না, এমন উদ্ভট কথা কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসে বিদ্যমান? থাকলে একটু উপস্থাপন করুন। এ উদ্ভট ব্যাখ্যা মানলে প্রশ্ন হল- মুসলমানদের নাম ইসলাম ছাড়া আর কোন কিছু রাখা কি জায়েজ নয়? পৃথিবীর সকল মুসলমানের নাম হবে ইসলাম? অন্য নাম রাখা শিরক? যে ভাই এ উদ্ভট গবেষণা পেশ করেছেন তার নাম কি শুধু ইসলাম? পিতার নাম, ছেলের নাম সবার নাম ইসলাম? কুরাইশ, আওস, খাজরাজ, হাশেম বংশ ইত্যাদি সকল গোত্রের নাম বলা শিরক? কারণ এসব গোত্রের নামে ইসলাম শব্দ নেই। গোত্র মানেইতো দল বা গোষ্ঠি তাহলে গোষ্ঠির নাম ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু রাখা শিরক উদ্ভট গবেষকের দৃষ্টিতে? নিজেদের পরিচয় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত বলা শিরক? কারণ এখানেওতো ইসলাম শব্দ নেই। সাহাবায়ে কেরামকে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগকে “মুহাজির” অন্য ভাগকে “আনসার” বলা শিরক? কারণ এখানেও সাহাবাগণের পরিচয় দিতে মুসলমান বা ইসলাম শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধু মুহাজির দল ও আনসার দল বলা হয়। ইসলাম শব্দ না থাকায় এমনটি বলা শিরক? মুসলমান সাহাবাগণের দু’টি নাম তথা “মুহাজির” ও “আনসার” এতো আল্লাহর দেয়া নাম। দেখুন সূরা তওবা-১০০। মুসলমানদের দলের নাম ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু রাখা শিরক হলে, সে শিরকতো খোদ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের শিখিয়েছেন। সাহাবাগণের দুইদলের একদলের নাম দিয়েছেন মুহাজির। আর আরেক দলের নাম দিয়েছেন আনসার। ইসলাম নামতো দিলেন না। তাহলে দলের নাম ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু রাখা শিরক হলে এ শিরক কে শিখিয়েছেন? জমহুর সাহাবীরা হযরত উসমান e কে হযরত আলী e থেকে উত্তম বলতেন। স্বাতন্ত্রতার জন্য হযরত উসমানকে উত্তম বর্ণানাকারীদের উসমানী বলা হয়। আর আলী e কে উত্তম বর্ণনাকারীদের আলিয়ী বলা হয়। কিছু তাবেয়ীকে উসমানী এবং আলিয়ী বলার বর্ণনা বুখারী শরীফের ১ নং খন্ডের ৪৩৩ নং পৃষ্টায় রয়েছে। তাহলে তাবেয়ীদের যে দলের নাম উসমানী, আর যে দলের নাম আলীয়ী তারা কি শিরক করেছেন নাউজুবিল্লাহ! সুতরাং বুঝা গেল যে, ইসলাম ধর্মের বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনে পরিচয় প্রকাশের জন্য ইসলাম সম্মত যে কোন নাম দলের, ব্যক্তির ও গোত্রের রাখা জায়েজ আছে। শুধু ইসলাম রাখা জরুরী নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন উদ্ভট গবেষকদের উদ্ভট গবেষণা থেকে মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ এপ্রিল, ২৩