ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তেই হবে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায১৯ মার্চ, ২২

প্রশ্ন

আমি মসজিদে নামায আদায় করি। আমার দু’টি প্রশ্ন আছে, যথা- ১-যোহর ও আসরের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম দুই রাকাতে চুপ থাকেন, তখন কি আমরা মনে মনে সূরা ফাতিহা এর সাথে অন্য সূরা পড়বো? নাকি চুপ থাকবো?

২. ৩রাকাত বা ৪ রাকাত ফরজ নামাযে ইমাম সাহেব যখন তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপ থাকেন, তখন আমরাও কি চুপ থাকবো নাকি মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়বো? দয়া করে উত্তর দিলে খুশি হবো, আর সঠিকভাবে সালাত আদায় করতে পারবো।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনার মনে প্রশ্ন দু’টি উদয় হওয়ার মূল কারণ হল, আপনার ধারণা মতে ইমাম সাহেব চার রাকাত ওয়ালী বা তিন রাকাতওয়ালী নামাযের ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে চুপ করে থাকেন, কোন কিছু পড়েন না। আপনি ধারণা করছেন যে, যোহর ও আসরের নামাযে ইমাম সাহেব কিছুই পড়েন না, চুপ করে থাকেন, তাই ইমাম চুপ থাকা অবস্থায় আপনিও চুপ করে থাকবেন কি না? নাকি কিছু পড়বেন? এ প্রশ্ন আপনার মনে জাগরুক হয়েছে। আপনি যদি জানতেন যে, ইমাম সাহেব যোহর ও আসর নামাযে মূলত চুপ করে থাকে না, বরং আস্তে আস্তে সূরা ফাতিহাসহ কিরাত পড়ে প্রথম দুই রাকাতে। আর শেষের দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে থাকে। শুধু চুপ করে থাকে না। চুপ থাকা তাকে বলে, যে কিছুই পড়ে না, কিন্তু যিনি আস্তে আস্তে পড়তেছেন, তাকে চুপ থাকা বলে না। ঠিক একই অবস্থা রাতের শেষ দুই রাকাতের। যেমন মাগরিবের তৃতীয় রাকাত এবং ইশার ফরজের শেষের দুই রাকাত। ইমাম সাহেব এসব রাকাতে শুধু চুপ করে থাকেন না, বরং তিনি সূরা ফাতিহা পড়ে থাকেন। আর যেহেতু পবিত্র কুরআনে ইমাম সাহেব যখন জোরে কিরাত পড়ে, তখন মুসল্লিকে কিরাত শুনতে আদেশ দিয়েছে, আর যখন ইমাম সাহেব আস্তে কিরাত পড়ে তখন মুসল্লিকে চুপ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। তাই মুসল্লির জন্য কোন অবস্থায়ই সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা মিলানো ইমামের পিছনে জায়েজ নয়। কুরআনে কারীমে এসেছে- وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ (٧:٢٠٤ আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। -সূরা আরাফ-২০৪ কুরআন তিলাওয়াতের সময় দুটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। যথা-

1. শ্রবণ করা।

2. নিশ্চুপ থাকা। কোন একটি বিষয় শুনার জন্য চুপ থাকতে হয়, তা সর্বজন বিদিত বিষয়। কথা বলতে বলতে কারো কথা শুনা যায় না। সুতরাং কোন কিছু শ্রবণ করতে মনযোগি হওয়া মানেই হল, তাকে চুপ থাকতে হবে, তাহলে আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয়বার কেন চুপ থাকার কথা বললেন? শ্রবণের জন্যতো চুপ থাকা আবশ্যক। এর জবাব হল, শ্রবণ করার সম্পর্ক হল, যেসব কিরাত ইমাম সাহেব জোরে জোরে পড়েন তার সাথে। অর্থাৎ যে কিরাত শুনা যায়, তা শুন। আর যে কিরাত শুনা যায় না, ইমাম আস্তে আস্তে পড়ে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে মুসল্লি চুপ করে থাকবে। তাহলে আয়াতর শ্রবণ করা ও নিশ্চুপ থাকা উভয় বক্তব্যই যথার্থ। কোনটি অতিরিক্ত বা অযথা আনা হয়নি। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না যেমন খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না, তেমনি সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। কিন্তু খুতবা যেমন ইমাম পড়লেই সবার পক্ষ থেকে হয়ে যায়, সবার খুতবা পড়ার দরকার নেই। তেমনি সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না, কিন্তু ইমাম সূরা ফাতিহা পড়লেই মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা আদায় হয়ে যায়, তার আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা পড়ার দরকার নেই। মুক্তাদীর আলাদা কিরাত পড়তে হয় না ইমামের কিরাত মানেই মুক্তাদীর কিরাত। যেমন ইমামের নামায শুদ্ধ হওয়া মানেই মুক্তাদীর নামায শুদ্ধ হওয়া। ইমামের নামায অশুদ্ধ হওয়া মানেই মুক্তাদীর নামায অশুদ্ধ হওয়া। যেমন ইমামের খুতবা পড়ার মানেই হল মুসল্লিদের খুতবা পড়া হয়ে যায়। আলাদাভাবে সবার খুতবা পড়ার দরকার নেই। যেমন একজন আজান দেয়ার দ্বারাই মুসল্লিদের সবার আজান দেয়া হয়ে যায়, আলাদাভাবে সবার আজান দিতে হয় না। যেমন একজন ইকামত দেয়ার দ্বারাই মুসল্লিদের সবার ইকামত হয়ে যায়, আলাদাভাবে সবার ইকামত দেয়ার দরকার নেই। তেমনি ইমামের সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ার দ্বারাই মুসল্লিদের পক্ষ থেকে সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়া হয়ে যায়, তাই মুক্তাদীর জন্য আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা বা কিরাত পড়ার কোন দরকার নেই। عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১২৯৪, মুজামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৭৫৫, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৩৩, মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-৩৭৬৪, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৮৯৭, মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭৭৯, মুসনাদে আবী হানীফা, হাদীস নং-২৫

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৯ মার্চ, ২২