ইমামের পিছনে কিরাত পড়াঃ সূরা ফাতিহা কুরআনের অন্তর্ভূক্ত নয়

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায৯ জানু, ২২

প্রশ্ন

মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী। এক আহলে হাদিস অনুসারিকে ‘ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়া জরুরী নয়’-এই প্রেক্ষিতে আমি নিম্নোক্ত হাদিস পেশ করিঃ হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীসনং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১২৯৪,মুজামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৭৫৫,সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৩৩,মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭,মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীসনং-৩৭৬৪, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-২৮৯৭, মুসন্নাফ ইবনে আবীশাইবা, হাদীস নং-৩৭৭৯, মুসনাদে আবীহানীফা, হাদীস নং-২৫ সেই আহলে হাদিস ভাইটি উপরোক্ত হাদিসটিকে জঈফ বললেন। কারণ হিসেবে বললেনঃ “ইমাম বুখারী বলেছেন, এই হাদীস মক্কা মদীনার কুফার মুহাদ্দিসদের কাছে প্রমাণিত নয়। ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন “যতগুলো সূত্র থেকে এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোতে দোষ আছে”। অতএব এই হাদীসটা জঈফ। তারপর বললেনঃ “আপনি বুঝতে ভুল করছেন ৷ আমরা ইমামের পিছে কিরাত পড়ি না ৷ সুরা ফাতিহা কিরাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এটা হল কুরআনের ভূমিকা ৷ এটা পড়তেই হবে ৷আপনি সুরা হিজর ৮৭ নং আয়াতটি দেখুন সেখানে সুরা ফাতিহাকে কুরআন থেকে আলাদা করা হয়েছে ৷ সুতরাং ইমামের পিছে সুরা ফাতিহা পড়তেই হবে, না হলে রাসুল c বলেছেন সালাত হবে না ৷” মুফতি সাহেব এর উত্তর দিলে উপকৃত হব।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

প্রথমে হাদীসটি এবং সে সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কেরামের উক্তগুলো দেখে নেই- عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ، فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ» হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীসনং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১২৯৪,মুজামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৭৫৫,সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৩৩,মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭,মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীসনং-৩৭৬৪, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-২৮৯৭, মুসন্নাফ ইবনে আবীশাইবা, হাদীস নং-৩৭৭৯, মুসনাদে আবীহানীফা, হাদীস নং-২৫ হাদীসটির ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য- ১ আল্লামা ইবনে কাসীর i বলেন, এটি মারফুর চেয়েও অধিক সহীহ। -আলআহকামুল কাবীর-২/৪৭২ ২ আল্লামা বুসিরী i বলেন, এর সনদটি বুখারী মুসলিমের সনদের মতই সহীহ। -ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ-২/১৬৮ ৩ আল্লামা কামাল ইবনে হুমাম i বলেন, মুসলিমের শর্তানুপাতে এ হাদীসটির সনদ সহীহ। -শরহে ফাতহুল কাদীর-১/৩৪৬ ৪ আল্লামা সানআনি i বলেন, অনেক সূত্রে তা বর্ণিত। এটি গ্রহণ করা আবশ্যক। -আলইদ্দাতু আলাল আহকাম-২/২৬৮ ৫ আলবানী i বলেন, হাদীসটি হাসান। -সহীহ ইবনে মাজাহ, বর্ণনা নং-৬৯৯, সহীহুল জামে, বর্ণনা নং-৬৪৮৭ ৬ আলবানী i আরো বলেন, মুসনাদে আহমদ বিন মানী এর সনদ প্রমাণিত হলে এটি সহীহ ও মাউসূল, নতুবা সহীহ সনদের মুরসাল। আর তার অনেক তুরুক রয়েছে যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। -আসলু সিফাতিস সালাত-১/৩৫৫ ৭ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী i বলেন, এর অনেক তুরুক রয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। -উমদাতুল কারী-৬/১৭ ৮ আল্লামা মোল্লা আলী কারী i বলেন, এর সনদ সহীহ। -শরহে মুসনাদে আবী হানীফা, বর্ণনা নং-৩০৮ এতগুলো মুহাদ্দিসগণের হাদীসটি সহীহ ও দলীলযোগ্য হওয়ার স্বীকৃতি দেয়ার পর বিশেষ করে কথিত আহলে হাদীসদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাসীরুদ্দীন আলবানী i যেখানে হাদীসটিকে দলীলযোগ্য বলছেন, সেখানে হাদীসটিকে বাতিল বলা অপরিণাদর্শীতা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। কিরাত খালফাল ইমাম বিষয়ে কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে আমাদের কয়েকটি প্রশ্ন ১ عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال من أدرك ركعة من الصلاة فقد أدركها قبل أن يقيم الإمام صلبه হযরত আবু হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযের রুকু পেয়ে যায় ইমাম তার পিঠ সোজা করার পূর্বে, সে ব্যক্তি উক্ত রাকাত পেয়ে গেল। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৪০৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৩২৯, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৫, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৬৯৩, নসবুর রায়াহ, হাদীস নং-৩২৭ তাহলে যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকু পেল কিন্তু কিয়াম পেল না, উক্ত ব্যক্তির নামায সুরা ফাতিহা ছাড়াই কিভাবে সঠিক হয়ে যায়? ২ কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা একাকী নামায পড়াকালীন সকল নামাযে সূরা ফাতিহা এবং অন্যান্য সূরা আস্তে পড়ে থাকে। কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে উক্ত আমলের প্রমাণ চাই। ৩ পানির সকল ফোটাই যেমন পানি, তেমনি কুরআনের অন্তর্ভূক্ত সকল আয়াতই কুরআন। তাহলে আল্লাহ তাআলা কুরআনে যা সহজ তা পড়ার নির্দেশ দেয়ার পরও (সূরা মুজ্জাম্মিল) সূরা ফাতিহাকে আবশ্যক করছে কেন কুরআনের বিরোধিতা করে? ৪ সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ হওয়া কোন সরীহ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? ৫ রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা না পড়বে তার নামায অসম্পূর্ণ। -সহীহ মুসলিম-১/১৬৯ বাতিল ও অসম্পূর্ণ হওয়ার মাঝে আকাশ পাতালের পার্থক্যতো একজন সাধারণ ব্যক্তিও জানে। অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা উক্ত নামাযকে বাতিল বলছে কেন রাসূল c এর বিরোধিতা করে কেন? ৬ রাসূল c জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন সর্বশেষ জামাতের সাথে নামায পড়েছেন। সে নামাযে প্রমাণ করুন রাসূল c হযরত আবু বকর সিদ্দিক e এর পিছনে পড়া প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়েছেন। তারপর দ্বিতীয় রাকাতে আবু বকর সিদ্দিক e ইমাম রাসূল c এর পিছনে মুক্তাদী হয়ে সূরা ফাতিহা পড়েছেন প্রমাণ করুন। এটা কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবে না। ৭ রাসূল c এর মেরাজের পূর্বে সূরা ফাতিহা নাজিল হয়েছিল। নামাযও পড়তেছিলেন। রাসূল c মেরাজের রাতে নবীগণের ইমামতী করেছেন। এবার একটি হাদীস দিয়ে কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, রাসূল c প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়েছেন,তারপর পরের রাকাতে উপস্থিত মুক্তাদী নবীগণও সূরা ফাতিহা পড়েছেন? ৮ ইমামের পিছনে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে থাকে, কুরআনে কারীমের বাকি ১১৩ সূরা না পড়ার কী কারণ? ৯ কুরআনে কারীমের ১১৩ সূরা আপনারা ইমামের পিছনে পড়েন না। ইমামের সুতরা এবং খতীবের খুতবাও সবার পক্ষ থেকে হয়। মুআজ্জিনের আজান সবার পক্ষ থেকে হয়, মুআজ্জিনের ইকামত সবার পক্ষ থেকে হয়, ইমামের ১১৩ সূরাও সবার পক্ষ থেকে হয়, কিন্তু কেবল মাত্র সূরা ফাতিহা সবার পক্ষ থেকে হয় না কেন? কুরআনের কোন আয়াত বা সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা এ বৈষম্য প্রমাণিত? ১০ গায়র মুকাল্লিদদের গায়র যিম্মাদার সাধারণ ভক্ত ও আলেমদের মতে ইমামের পিছনে কুরআনে কারীমের ১১৪ সূরার মাঝে ১১৩ সূরা পড়া হারাম। শুধুমাত্র এক সূরা তথা সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ। যে ব্যক্তি এটি না পড়বে, তার নামায হবে না। এই পূর্ণ দাবির স্বপক্ষে কুরআনের আয়াত বা সহীহ সরীহ হাদীস দেখান। সূরা ফাতিহা কিরাতের অন্তর্ভূক্ত নয়? এটি খুবই আশ্চর্যজনক বক্তব্য। নিজের খাহেশাতপূর্ণ মতকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য সূরায়ে ফাতিহার মত কুরআনের একটি মূল সূরাকে কিরাত থেকে বের করে দেয়ার মানসিকতা কতটা ভয়ানক মানসিকতা তা বলাই বাহুল্য। যারা নিজের মনগড়া সাব্যস্ত করার জন্য সূরা ফাতিহার মত সূরা কুরআন থেকে বের করে দেয়ার স্পর্ধা দেখাতে পারে, তারা নিজের মতের উল্টো হলে পুরো কুরআনকেই অস্বিকার করে বসে কি না? সেই ভয়ও জাগরিত হচ্ছে। আসুন দেখে নেই সূরা হিজরের ৮৭ নং আয়াতটি وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ (١٥:٨٧ আমি আপনাকে সাতটি বারবার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কুরআন দিয়েছি। -সূরা হিজর- ৮৭ এই আয়াতের কোথায় বলা হচ্ছে যে, সূরা ফাতিহা কিরাত না? কোন শব্দে বলা হল এটি কুরআনের অন্তর্ভূক্ত নয়? বড়ই আশ্চর্য মানসিকতা ভাইদের। নিজেদের মনগড়া সাব্যস্ত করতে কুরআন অস্বিকার করার মত ঘৃণ্য মানসিকতা যারা প্রদর্শন করতে পারে তাদের ক্ষেত্রে কি আর বলার আছে? ফাতিহা কুরআন হওয়াকে অস্বিকারকারীদের যুক্তি যেহেতু সূরা হিজরের উক্ত আয়াতে সূরা ফাতিহাকে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে তারপর “ওয়াও”হরফ আনার পর কুরআনের কথা বলা হয়েছে। আর “ওয়াও”এসে উভয় পাশের দুইটি বস্তুকে আলাদা করে দেয়। তাই সূরা ফাতিহা আর কুরআন আলাদা বিষয়। সূরা ফাতিহা কুরআনের অন্তর্ভূক্ত নয়। অন্তর্ভূক্ত থাকলে আলাদাভাবে উল্লেখ করার কি দরকার? অসাড় যুক্তির খন্ডন এর নাম কুরআনও সহীহ হাদীসের অনুসারী। কুরআন ও সহীহ হাদীস রেখে নিজের অসাড় যুক্তির পূজারী নিজের নাম দিয়েছে সহীহ হাদীসের অনুসারী। নিজের অসম্পূর্ণ বুদ্ধি দিয়ে যুক্তি দিয়ে সূরায়ে ফাতিহার মত মহান সূরাকে কুরআন থেকে বের করে দেয়া হল, অথচ একবারও হাদীসগুলোর দিকে তাকানো হলো না। যেসব হাদীসে সূরা ফাতিহাকে শুধু কিরাতই বলা হয়নি বরং কুরআনের মহান সূরা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দেখুন- ইমাম বুখারী i বুখারী শরীফের তাফসীর অধ্যায়ের সূচনা করেছেন এই বক্তব্য দিয়ে- وَسُمِّيَتْ أُمَّ الكِتَابِ أَنَّهُ يُبْدَأُ بِكِتَابَتِهَا فِي المَصَاحِفِ، وَيُبْدَأُ بِقِرَاءَتِهَا فِي الصَّلاَةِ، وَالدِّينُ: الجَزَاءُ فِي الخَيْرِ وَالشَّرِّ، كَمَا تَدِينُ تُدَانُ ” وَقَالَ مُجَاهِدٌ: ” (بِالدِّينِ) (الانفطار: 9): بِالحِسَابِ، (مَدِينِينَ) (الواقعة: 86): مُحَاسَبِينَ “ অনুচ্ছেদ সূরা ফাতিহা প্রসঙ্গে। সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব (কিতাবের মূল) হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, সূরা ফাতিহা লিখন দ্বারাই কুরআন গ্রন্থকারে লেখা আরম্ভ করা হয়েছে। আর সূরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে নামাযও আরম্ভ করা হয়। -সহীহ বুখারী, বাংলা অনুবাদ ইফাবা-৭/২৫৩ তারপর ইমাম বুখারী i হাদীস আনলেন হযরত আবূ সাঈদ মুআল্লা e থেকে। যে হাদীসের একাংশে রাসূল c বলেন মুআল্লাকে বললেন, لَأُعَلِّمَنَّكَ سُورَةً هِيَ أَعْظَمُ السُّوَرِ فِي القُرْآنِ، قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ المَسْجِدِ». ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي، فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ، قُلْتُ لَهُ: «أَلَمْ تَقُلْ لَأُعَلِّمَنَّكَ سُورَةً هِيَ أَعْظَمُ سُورَةٍ فِي القُرْآنِ»، قَالَ: (الحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ) (الفاتحة: 2) «هِيَ السَّبْعُ المَثَانِي، وَالقُرْآنُ العَظِيمُ الَّذِي أُوتِيتُهُ» তুমি মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তোমাকে আমি কুরআনের এক মহান সূরা শিক্ষা দিব। তারপর তিনি আমার হাত ধরলেন। এরপর যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছে করেন তখন আমি তাঁকে বললাম, আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতম সূরা শিক্ষা দিবেন বলেছিলেন? তিনি বললেন- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন”। এটা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন যা আমাকেই প্রদান করা হয়েছে। -সহীহ বুখারী, ইফাবা হাদীস নং-৪১২২, আরবী কিতাবের হাদীস নং-৪৪৭৪, ৪২০৪ সূরা হিজরের আয়াতটি দেখার পর যদি ইমাম বুখারী i এর শিরোনামের বক্তব্য এবং উদ্ধৃত হাদীসটির দিকে দৃষ্টি দেয়ার তৌফিক কথিত আহলে হাদীসদের হতো, তাহলে কুরআনের সূরা অস্বিকার করার মত এত স্পর্ধার কাজে হয়তো তারা উপনিত হতেন না। উক্ত শিরোনাম এবং হাদীস কি প্রমাণ করছে? ১ সূরা ফাতিহা শুধু কুরআনই নয় বরং উম্মুল কুরআন তথা কুরআনের মূল। আর মূল যদি কুরআন না হয় তাহলে বাকিটা কুরআন হয় কি করে? ২ কুরআন লিখতে শুরু করলে শুরুতেই সূরা ফাতিহা লিখতে হবে। যা কুরআন নয়, তা কুরআন লেখার সময় লেখা আবশ্যক হয় কি করে? ৩ কুরআনের সূরা সমূহের শ্রেষ্ঠতম সূরার নাম সূরা ফাতিহা। শ্রেষ্ঠতম সূরাই যদি কুরআন না হয়, তাহলে বাকিগুলোর কি অবস্থা হবে? ৪ সূরা ফাতিহার শ্রেষ্ঠত্ব এবং কুরআনের মূল বুঝানোর জন্য আলাদাভাবে স্বতন্ত্রভাবে কুরআনের আয়াতে এবং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। যাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতম ও মূল সূরা বুঝানোর আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেটিকেই কুরআন থেকে বাদ দেয়া স্পর্ধা ছাড়া আর কি হতে পারে? এবার রইল আয়াতে “ওয়াও”বলে কেন সূরা ফাতিহাকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হল? এ বিষয়টি। আসলে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্ব বুঝানোর জন্য যা আমরা বুখারীর বর্ণনাও বুখারীর শিরোনামের বক্তব্য দ্বারা পরিস্কার ভাষায় বুঝতে সক্ষম হয়েছি। “ওয়াও”বলে কোন কথা উল্লেখ করলে তা পরের বস্তু থেকে আলাদা হয়ে যায় এমন ধারণা অজ্ঞতা ছাড়া কিছু নয়। এরকম আরো উদাহরণ পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান রয়েছে যাতে একটি বস্তুকে পরের বস্তু থেকে “ওয়াও”দিলে আলাদা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তা পরে উল্লেখিত বস্তুরই অন্তর্ভূক্ত। শুধু শ্রেষ্ঠত্ব বুঝানোর আলাদা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। যেমন- تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ (4 ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। -সূরা মাআরিজ-৪ এ আয়াতে প্রথমে বলা হয়েছে ফেরেস্তার কথা তারপর “ওয়াও”হরফ এনে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে রূহ তথা জিবরাঈল এর কথা। কথিত আহলে হাদীস ভাইদের থিউরী অনুপাতে তাহলে এখানে “ওয়াও”এনে ফেরেস্তাদের থেকে আলাদাভাবে জিবরাঈল বলার কারণে জিবরাঈল ফেরেস্তার অন্তর্ভূক্ত আর থাকেন না? তিনি আলাদা কিছু হয়ে গেছেন? একজন সাধারণ ইলমওয়ালাও বুঝবে যে, আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণে শ্রেষ্ঠত্ব বুঝানো। ফেরেস্তা থেকে বাদ দেয়া উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, “ওয়াও”দিয়ে সূরা ফাতিহার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝানোর কারণে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা যার শ্রেষ্ঠ সূরা বুঝানোর জন্য বলা হলো সেটি থেকে বের করে দিলেন। হায়রে ইনসাফ! আরেকটি আয়াত দেখা যেতে পারে- فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ (68 তথায় আছে ফল-মূল, খর্জুর ও আনার। -সূরা আররাহমান-৬৮ সূরা আররহামানের উক্ত আয়াতে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে ফলমুল তারপর “ওয়াও”দিয়ে আলাদাভাবে পরপর খেজুর ও আনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু “ওয়াও”দিয়ে আলাদাভাবে আনার ও খেজুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে এ দু’টি ফল ফলমূলের অন্তর্ভূক্ত নয়? এমন কথা কি কোন বিবেকবান মানুষ বলতে পারে? আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, সূরা ফাতিহাকে সূরা হিজরে মূলত আলাদাভাবে উল্লেখের কারণ হল, কুরআনের সূরার মাঝে সূরা ফাতিহার শ্রেষ্ঠত্ব তোলে ধরা। কুরআন থেকে এ সূরাটিকে বাদ দেয়া নয়। যেমন সুরা মাআরিজ ও সূরা রহমানের আয়াত দ্বারাও বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেল। কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে আমাদের প্রশ্ন ১ শুধুমাত্র একটি সহীহ সরীহ হাদীস পেশ করতে বলুন উক্ত ব্যক্তিকে যে হাদীসে বলা হয়েছে সূরা ফাতিহা কিরাতের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিংবা সূরা ফাতিহা কুরআনের অন্তর্ভূক্ত নয়। ২ পৃথিবীতে বিদ্যমান একটি কুরআনের নুসখা দেখাতে বলুন, যাতে সূরা ফাতিহাকে কুরআনের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। শুধুমাত্র একটি নুসখা। ৩ যেহেতু তাদের দাবি মতে সূরা ফাতিহা কুরআন নয় এবং কিরাতের অন্তর্ভূক্ত নয়, তাই কুরআন পড়লে যে সওয়াবের কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এই সওয়াব কি সূরা ফাতিহা পড়লে হবে না? এ মতের পক্ষে একটি সহীহ সরীহ হাদীস পেশ করতে বলুন। ৪ কেউ যদি সূরা ফাতিহাকে অস্বিকার করে তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে কুরআন অস্বিকারকারী সাব্যস্ত করা হবে কি না? কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জবাব চাই।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৯ জানু, ২২