ইমাম বুখারী মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেননি বুকের উপর হাত বাঁধার দলীল বিষয়ে কথিত আহলে হাদীসদের ধোঁকাবাজী উন্মোচন

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায১৯ মার্চ, ২২

প্রশ্ন

সহীহ ইবনে খুযাইমাতে উল্লেখিত সুফিয়ান ছাওরী i , আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর e থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল c -এর সাথে নামায পড়লাম … তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন। -সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯ এই হাদীসটির রাবী মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেননি, তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন মুয়াম্মাল ইবনে সাঈদকে। কিন্তু আমি অনেক ইন্টারনেটে অনেক লিখাতে পড়েছি মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকেই তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন। দয়া করে কি ব্যাখ্যা করবেন কোনটা সঠিক?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” একথার দাবিতে অটল থেকে বুকের উপর কোন দলীল পেশ করতে সক্ষম নন। তাই এক্ষেত্রে চালাকীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কুরআন ও সহীহ হাদীসই যদি কেবল দলীলযোগ্য হয়, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্যের অনুসরণ যদি শিরক পর্যায়ের তাকলীদ হয়ে থাকে, তাহলে সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসটি তাদের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ও রাসূল c থেকে কি সহীহ সাব্যস্ত করিয়েছেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ ও রাসূল c যে হাদীসকে সহীহ বলেননি, সে হাদীসকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের রেফারেন্স ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্য দিয়ে সহীহ বলাটা কি উক্ত মুহাদ্দিসের অন্ধ তাকলীদ নয়? আমরা বিজ্ঞ মুজতাহিদের তাকলীদ করলে শিরক, আর তারা করলে সেটি কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল হয় কি করে? মুখে মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল মানার স্লোগান, আর কাজেকর্মে উম্মতীর বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়াই অন্ধভাবে মেনে নেয়ার নাম আর যাই কিছু হোক, কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ নয়, বরং ধোঁকাবাজী। বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীল যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা কোথাও পেলেন না নিজেদের উদ্ভাবিত থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” অনুপাতে। তখন প্রথমেতো কুরআন ও হাদীসের দলীল ছাড়াই মুহাদ্দিসীনে কেরামের তাকলীদ করে সহীহ ইবনে খুজাইমার হাদীসটিকে সহীহ বলা শুরু করলেন। কিন্তু যখনি আমরা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যে, যে ইমাম বুখারী i এর সকল মন্তব্যকেই চূড়ান্ত ও হক বলে বিশ্বাস করে থাকে, তিনি উক্ত বর্ণনাটির একজন রাবী মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে “মুনকারুল হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন, তখন তাদের টনক নড়ল। নতুন বুদ্ধি বের করলেন। সেটি হল, মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলকে মুয়াম্মাল বিন সাঈদ বানিয়ে দেয়া। এ এক আজীব চালাকী। চলুন, দেখি ইমাম বুখারী i মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল i কেই কি “মুনকারুল হাদীস” বলে মন্তব্য করেছেন নাকি না? সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম তাদের স্বীয় কিতাবে কি লিখেছেন? ১ আল্লামা মিজ্জী i লিখেছেন- وقَال البُخارِيُّ: منكر الحديث. তথা ইমাম বুখারী i বলেছেন, তিনি (মুআম্মাল বিন ইসমাঈল i ) মুনকারুল হাদীস। -তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল, বর্ণনা নং-৬৩১৯ ২ ইমাম যাহাবী i বলেন, ইমাম বুখারী i বলেছেন, মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল মুনকারুল হাদীস। আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭, তারীখুল ইসলাম, বর্ণনা নং-৩৮০, সিয়ারু আলামিন নুবালা, বর্ণনা নং-১৫৪৬, জিকরু মান তাকাল্লামা ফীহি, বর্ণনা নং-৩৪৭, মিযানুল ইতিদাল, বর্ণনা নং-৮৯৪৯। ৩ ইবনে হাজার আসকালানী i বলেন, ইমাম বুখারী i মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। -তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮, লিসানুল মিযান, বর্ণনা নং-৪৯৮৭ ৪ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী i বলেন, ইমাম বুখারী i মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। -মাগানিয়ুল আখয়ার, বর্ণনা নং-২৪১৯ ৫ আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ইয়ামানী i বলেন, ইমাম বুখারী i মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। (খুলাসাতুল তাহযীবু তাহযীবিল কামাল) এতগুলো গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণ এতসব কিতাবে ইমাম বুখারী i এর মন্তব্যটি নকল করেছেন। ইমাম বুখারী i মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে নয়, মুয়াম্মাল বিন সাঈদ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন, এমন কথা কোন পূর্ববর্তী কোন গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমাম কি বলেছেন? কেউ বলেননি, সবাই মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কেই ইমাম বুখারীর মন্তব্যটির নিসবত করেছেন। মুআম্মাল বিন সাঈদের কথা কেউ বলেননি। একথা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, বর্তমানের নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা নিজেদের দলীলহীন মাসআলা প্রমাণের জন্য এতসব গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণের অবস্থানকে ভুল সাব্যস্ত করার হীন কর্মকান্ডে নেমেছেন। আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীস নামধারী এসব ভ্রান্তদের চক্রান্ত থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন। একটি মজার কথা একই ব্যক্তি যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইদের মাসআলার খেলাফ হন, তখন তিনি জঈফ ও অগ্রণযোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যান, আবার উক্ত ব্যক্তিই যখন নিজেদের পক্ষের কোন মাসআলার দলীল হন, তখন তিনি কি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে যান সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। প্রথমে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির সনদটির দিকে আমরা একটু দৃষ্টি বুলিয়ে নেইঃ مؤمل عن سفيان عن عاصم بن كليب عن ابيه عن وائل بن حجر অনুবাদ-মুআম্মাল সুফিয়ান ছাওরী i থেকে, তিনি আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর e থেকে বর্ণনা করেছেন। এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কয়েকটি ধোঁকাবাজী লক্ষ্য করি। ধোঁকাবাজী নং-১ সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত হাদীসটির সূত্রে মুআম্মাল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান সওরী i থেকে, আর সুফিয়ান সওরী i আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করেছেন। আর এ সূত্রটিকে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সহীহ সনদ বলে প্রচার করছেন। অথচ একই ধরণের সনদ তথা সুফিয়ান সওরী i আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা সম্বলিত রফয়ে ইয়াদাইন রুকুতে গমণ ও উঠার সময় ছেড়ে দেয়ার বর্ণনা যখন আমরা আবু দাউদ, তিরমিজী ও নাসায়ী থেকে পেশ করি। তখন তারা বলে এ সনদ দুর্বল। কারণ সুফিয়ান সওরী i নাকি মুদাল্লিস। আর তিনি “আন” শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদীসটি দুর্বল। অথচ সহীহ ইবনে খুজাইমার মাঝে সেই সুফিয়ান সওরী i যখন “আন” শব্দের মাধ্যমে আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করছেন তখন এ হাদীস তাদের গলার মালা হয়ে গেল। এখন কোথায় গেল “আন” বললে জঈফ হয়, বা সুফিয়ান সওরী i মুদাল্লিস সম্বলিত বক্তব্য? ধোঁকাবাজী নং-২ রুকুতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ীর হাদীসটিকে তারা পরিত্যাজ্য আরেকটি কারণে বলে থাকে, সেটি হল, উক্ত হাদীসটির সনদে আসেম বিন কুলাইবন “মুনফারিদ” তথা একাকী বর্ণনাকারী। আর আসেম বিন কুলাইব যখন মুনফারিদ হন, তখন তিনি দলীলযোগ্য হন না। কিন্তু মজার বিষয় হল, সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত সনদটিতেও আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ। এরকম বর্ণনা ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে আর কারো সূত্রে নেই। তাহলে তিরমিজী, নাসায়ী ও আবু দাউদের রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার হাদীস আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ হওয়ার কারণে দলীলযোগ্য না থাকলে সহীহ ইবনে খুজাইমাতে মুনফারিদ হওয়া সত্বেও দলীলযোগ্য হয়ে গেলেন কিভাবে? বড়ই অবাক করা ভাইদের মানসিকতা! ধোঁকাবাজী নং-৩ সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত হাদীসটির পরেই বর্ণিত হয়েছে কাছাকাছি সূত্রে- عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ الْجَرْمِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّ وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ أَخْبَرَهُ قَالَ: قُلْتُ: ” لَأَنْظُرَنَّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ يُصَلِّي قَالَ: فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ، قَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ، আসেম বিন কুলাইব তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e বর্ণনা করেন, ওয়াইল বিন হুজুর e বলেন, আমি রাসূল c দেখছিলাম তিনি কিভাবে নামায আদায় করেন, তখন আমি দেখলাম, তিনি দাঁড়ালেন, তারপর তাকবীর দিলেন, তারপর উভয় হাত উঠালেন কানের লতি পর্যন্ত। -সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৮০ আসেম বিন কুলাইব, তার পিতা, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর e এর সূত্রে প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীসটি উল্লেখ করা হল, সেটির নং হল, ৪৭৯, আর একই সূত্র তথা কুলাইব তার পিতা, পিতা হযরত ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল c নামাযে কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন। অথচ কথিত আহলে হাদীসরা মহিলাদের মত কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠায়। কান পর্যন্ত হাত উঠায় না। এ হাদীসটির মুখালাফাত করে থাকে। এক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে গলার মালা বানানো, আরেক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে বাদ দিয়ে দেয়ার নাম কি সহীহ হাদীসের উপর আমল না মনের পূজা? ইমাম বুখারী i মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস না বললেও উক্ত হাদীস কথিত আহলে হাদীসদের দলীল হতে পারে না। কারণ ২টি। যথা- ১ম কারণঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈল মুনফারিদ আসেম বিন কুলাইব, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে। এ সূত্রের মাধ্যমে রাসূল c এর নামায সংক্রান্ত একাধিক সূত্র এসেছে। কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করছি- ১ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنِي سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ আব্দুল্লাহ বিন ওয়ালীদ, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৭১حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، শারীক বর্ণনা করেন আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৬৮حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ আব্দুর রাজ্জাক তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৫৮عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯১২حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، বিশর বিন মুফাদ্দাল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭২৬عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي عَائِشَةَ عَنْ عَاصِم بْنِ كُلَيْبٍ، عَن أَبيهِ، عَن وَائِلِ بْنِ حُجْر، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، মুসা বিন আবী আয়শা থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪৮৯قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، কুতাইবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১২৬৩ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ ইবনে ফুযাইল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮شُعْبَةُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ শুবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮ ১০ عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ আবু ইসহাক আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর e থেকে…..। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭০৫ মাত্র ১০টি সূত্র উল্লেখ করলাম। এরকম আরো অসংখ্য সূত্রে উক্ত বর্ণনাটি এসেছে। কিন্তু কোথাও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের সূত্রে এসেছে বুকের উপর কথাটি। তাই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধা বলার ক্ষেত্রে মুনফারিদ। আর সমস্ত জরাহ তাদীলের ইমামগণ একমত যে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল প্রচুর ভুল করতেন। সুতরাং একথা সহজেই বুঝা যায় যে, উক্ত বর্ণনাটিতে বুকের উপর কথাটি তিনি হয়তো ভুলেই বলেছেন। নতুবা আর কারো সূত্রে একথা আসেনি কেন? মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল i ভুল করে উক্ত বর্ণনাটি আনতে পারেন। দলীল মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট-

1. ইবনে সাদ i বলেন, তথা তিনি সিকা তবে প্রচুর ভুল করেন। -আততাবকাতুল কুবরা, বর্ণনা নং-১৬৫৬

2. মুহাম্মদ বিন হিব্বান i বলেন, তিনি প্রায় ভুল করতেন। -আসসিকাতুল লিইবনে হিব্বান, বর্ণনা নং-১৫৯১৫

3. আল্লামা খতীব বাগদাদী i বলেন, তিনি প্রচুর করতেন। -তারীখে বাগদাদ-৬

4. ইমাম আবু হাতেম i বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। -আলজারহু ওয়াততাদীল, বর্ণনা নং-১৭০৯

5. আল্লামা যাহাবী i বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। -আলকাশশাফ, বর্ণনা নং-৫৭৪৭

6. ইমাম আবূ জুরআ i বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। -আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭

7. ইমাম দারা কুতনী i বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করেন। -তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮ ২য় কারণঃ হাদীসটির বর্ণনাকারীই উক্ত হাদীসের বিপরীত আমল করেন একথা সহজেই অনুমেয় যে, যিনি কোন কথা বর্ণনা করার পর উক্ত কথার বিপরীত কাজ করে থাকেন, তার কাছে তার বর্ণিত কথাটি আমলযোগ্য বা জরুরী নয় বলেই পরিস্কার বুঝা যায়। আর সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসের সূত্রের একজন রাবী হলেন, হযরত সুফিয়ান সওরী i । আর খোদ তিনিই বুকের উপর হাত বাঁধার মতকে গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নাভির নিচে হাত বাঁধতেন। ইমাম নববী i শরহে মুসলিমে উল্লেখ করেছেন- وقال ابو حنيفة وسفيان واسحاق بن راهوية وابو اسحاق المروازى من اصحابنا يجعلهما تحت سرته তথা ইমাম আবু হানীফা i , সুফিয়ান সওরী i , ইসহাক বিন রাহুয়া i এবং আমাদের আসহাবদের মাঝে আবু ইসহাম মারওয়াজী i বলেন যে, উভয় হাতকে নাভির নিচে বাঁধতে হবে। -শরহে মুসলিম লিননববী-১/৭৩ আর বর্ণনাকারী খোদ নিজেই যখন স্বীয় বর্ণনার খেলাফ আমল করেন, তখন উক্ত বর্ণনা আমলহীন তা স্পষ্টতই বুঝে আসে। সুতরাং একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, আসলে বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীলই নেই। যা কিছু কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করে বেড়ান, তা সবই তাদের নিজেদের তৈরীকৃত থিউরী অনুপাতেই ধোঁকাবাজী সাব্যস্ত হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের ফিতনা থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযাত করুন। আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৯ মার্চ, ২২