ইমাম আবূ হানীফা i জঈফ রাবী ছিলেন

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

ইমাম আবূ হানীফা i জঈফ রাবী ছিলেন? মুহাদ্দিসীনে কেরাম তার ব্যাপারে জরাহ তথা সমালোচনা করেছেন? বিষয়টি পরিস্কার করার অনুরোধ।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

মুসলিম বিশ্বের গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ রিজালশাস্ত্রের ইমামদের সংকলিত শুধু ১০টি কিতাবের নাম উল্লেখ করছি। যা এসব ভ্রান্ত ওয়াসওয়াসাকে বাতিল করতে এবং জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির মনকে প্রশান্ত করতে যথেষ্ট হবে বলে মনে করি। ১ ইমাম যাহাবী i । আহলে ইলম বলতেই যারা তার নাম জানেন বিখ্যাত জারাহ তাদীলের ইমাম হিসেবে। জারাহ তাদীল সম্পর্কিত একাধিক কিতাবের সংকলক। এই ইমাম যাহাবী i হাফীজুল হাদীস সম্পর্কিত একটি কিতাব সংকলন করেছেন। হাফীজুল হাদীস কি? ইলমে হাদীস বিষয়ে সম্মক অবগত প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন যে, হাফীজুল হাদীস ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, কমপক্ষে ১লাখ হাদীস সনদ ও মতনসহ মুখস্ত যে ব্যক্তির রয়েছে, তাকে বলা হয় হাফীজুল হাদীস। হাফীজুল হাদীসদের আলোচনামূলক ইমাম যাহাবী i এর উক্ত গ্রন্থটির নাম “তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ”। উক্ত গ্রন্থে হাফেজ যাহাবী i ইমাম আজম আবূ হানীফা i সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যা স্পষ্টরূপে ইমাম আবূ হানীফা i কে হাফেজ যাহাবী i হাফীজুল হাদীসের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। যেখানে তিনি ইমাম আবূ হানীফা i এর সংক্ষিপ্ত জীবনী উল্লেখ করেছেন। সম্বোধন শুরু করেছেন “ইমাম আজম” বলে। সংক্ষিপ্ত উক্ত পরিচিতিতে প্রশংসাসূচক অসংখ্য বক্তব্য উদ্ধৃত করলেও কোথাও একটি শব্দও ইমাম আবূ হানীফা i সম্পর্কে সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি। বরং সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, “আমি ইমাম আবূ হানীফা i এর মানাকেব ও ফযীলত সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র পুস্তকও রচনা করেছি। (তাযকিরাতুল হুফফাজ, রাবী নং-১৬৩, আহলে ইলমদের জন্য তাযকিরাতুল হুফফাজের উক্ত ইবারতগুলো উদ্ধৃত করে দিচ্ছি- 163- 10/ 5 ع- أبو حنيفة الإمام الأعظم فقيه العراق النعمان بن ثابت بن زوطا التيمي مولاهم الكوفي: مولده سنة ثمانين رأى أنس بن مالك غير مرة لما قدم عليهم الكوفة رواه ابن سعد عن سيف بن جابر أنه سمع أبا حنيفة يقوله. وحدث عن عطاء ونافع وعبد الرحمن بن هرمز الأعرج وعدي بن ثابت وسلمة بن كهيل وأبي جعفر محمد بن علي وقتادة وعمرو بن دينار وأبي إسحاق وخلق كثير. تفقه به زفر بن الهذيل وداود الطائي والقاضي أبو يوسف ومحمد بن الحسن وأسد بن عمرو والحسن بن زياد اللؤلؤي ونوح الجامع وأبو مطيع البلخي وعدة. وكان قد تفقه بحماد بن أبي سليمان وغيره وحدث عنه وكيع ويزيد بن هارون وسعد بن الصلت وأبو عاصم وعبد الرزاق وعبيد الله بن موسى وأبو نعيم وأبو عبد الرحمن المقري وبشر كثير وكان إماما ورعا عالما عاملا متعبدا كبير الشأن لا يقبل جوائز السلطان بل يتجر ويتكسب. قال ضرار بن صرد: سئل يزيد بن هارون أيما أفقه: الثوري أم أبو حنيفة؟ فقال: أبو حنيفة أفقه وسفيان أحفظ للحديث. وقال ابن المبارك: أبو حنيفة أفقه الناس. وقال الشاقعي: الناس في الفقه عيال على أبي حنيفة. وقال يزيد: ما رأيت أحدًا أورع ولا أعقل من أبي حنيفة. وروى أحمد بن محمد بن القاسم بن محرز عن يحيى بن معين قال: لا بأس به لم يكن يتهم ولقد ضربه يزيد بن عمر بن هبيرة على القضاء فأبى أن يكون قاضيا. قال أبو داود رحمه الله: أن أبا حنيفة كان إماما. وروى بشر بن الوليد عن أبي يوسف قال: كنت أمشي مع أبي حنيفة فقال رجل لآخر: هذا أبو حنيفة لا ينام الليل , فقال: والله لا يتحدث الناس عني بما لم أفعل , فكان يحيي الليل صلاة ودعاء وتضرعا. قلت: مناقب هذا الإمام قد أفردتها في جزء. كان موته في رجب سنة خمسين ومائة 1 رضي الله عنه. أنبأنا ابن قدامة أخبرنا بن طبرزد أنا أبو غالب بن البناء أنا أبو محمد الجوهري أنا أبو بكر القطيعي نا بشر بن موسى أنا أبو عبد الرحمن المقرئ عن أبي حنيفة عن عطاء عن جابر أنه رآه يصلي في قميص خفيف ليس عليه إزار ولا رداء قال: ولا أظنه صلى فيه إلا ليرينا أنه لا بأس بالصلاة في الثوب الواحد. ইমাম যাহাবী i যেখানে ইমাম আবূ হানীফা i কে হাফীজুল হাদীস হিসেবে গণ্য করছেন। তার প্রশংসার উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেই সাথে তাযকীরাতুল হুফফাজে অসংখ্য প্রশংসাসূচক বক্তব্য এনেছেন। কিন্তু কোথাও একটি শব্দও সমালোচনা হিসেবে উপস্থিত হিসেবে উপস্থিত করেননি। তার ব্যাপারে এমন জুলুমানা কথা মিথ্যুক ছাড়া আর কে বলতে পারে? ২ প্রখ্যত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী i তার প্রসিদ্ধতম জারাহ তাদীলের গ্রন্থ “তাহযীবুত তাহযীব” এ কোন একটি শব্দও ইমাম আবূ হানীফা i সম্পর্কে সমালোচনামূলক উচ্চারণ করেননি। বরং তিনি ইমাম আজম সম্পর্কে প্রশংসা ও মানাকেব বর্ণনা করার পর স্বীয় বক্তব্যকে এই দুআর উপর শেষ করেছেন, مناقب الإمام أبي حنيفة كثيرة جدا فرضي الله تعلى عنه واسكنه الفردوس آمين ইমাম আবূ হানীফার মর্যাদাতো অনেক, এর বদলায় আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন। -তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং-৮১৭ ৩ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী i স্বীয় গ্রন্থ “তাকরীবুত তাহজীব” এও একটি বাক্য ইমাম আজম i এর ব্যাপারে সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি। ৪ রিজাল শাস্ত্রের বড় ইমাম সফিউদ্দীন খাজরাজী i তার “খুলাসাতু তাহযীবু তাহযীবিল কামাল” নামক গ্রন্থে ইমাম আজম i সম্পর্কে শুধু ফাযায়েল ও মানাকেবই লিখেছেন। একটি বাক্যও সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি। ৫ রিজাল শাস্ত্রের গ্রন্থ তাহযীবু তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল লিজযাহাবীতেও একটি বাক্যও ইমাম আজম সম্পর্কে সমালোচনামূলক নেই। ৬ ইমাম আব্দুল গনী মাকদিসী i এর লেখা জারাহ তাদীলের গ্রন্থ “আলকামাল ফী আসমায়ির রিজাল” এও একটি বাক্য সমালোচনামূলক উল্লেখ করা হয়নি। ৭ ইমাম আবুল হাজ্জাজ আলমিজ্জী i এর জারাহ তাদীল গ্রন্থ “তাহযীবুল কামাল” এর মাঝে কোথাও ইমাম সাহেব সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়নি। ৮ ইমাম নববী i তার জারাহ তাদীল গ্রন্থ “কিতাবু তাহযীবুল আসমায়ি ওয়াল লুগাত” এ সাত পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম সাহেব i এর হালাত ও প্রশংসা লিখলেও একটি বাক্য দিয়েও সমালোচনা করেননি। ৯ ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিন আসআদ আলইয়ামেনী ইয়াফেয়ী i ইমাম আজম i সম্পর্কে হালাত ও মানাকেব তার স্বীয় গ্রন্থ “কিতাবু মিরআতিল জিনান ওয়া ইবরাতিল ইয়াকজান” এ উল্লেখ করলেও একটি সমালোচনা বাক্য বলেননি। বরং উল্টো তারীখে বাগদাদে উল্লেখিত খতীব বাগদাদীর সমালোচনা ঠিক নয় মর্মে ইংগিতও করেছেন। ১০ ফক্বীহ ইবনুল আব্বাদ আলখলীলী i স্বীয় গ্রন্থ “শুজারাতুজ যাহাব ফী আখবারি মান যাহাব’ এ ইমাম আজম i সম্পর্কে শুধু হালাত ও মানাকেবই লিখেছেন, জারাহমূলক একটি বাক্যও নিঃসরণ করেননি। জারাহ তাদীলের প্রসিদ্ধ ও মান্যবর ইমামগণ যেখানে ইমামে আজম i সম্পর্কে একটি বাক্যও সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি, সেখানে ইমাম সাহেবকে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব বলা অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যুকদের ধোঁকা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২