ইফতার মাহফিলে অমুসলিমকে দাওয়াত দেয়া সন্দেহযুক্ত টাকা থেকে চাঁদা নেয়ার হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসরোজা১২ জানু, ২২

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত শাইখ আমার ৩টি প্রশ্ন ছিল। ইফতার মাহফিলে দাওয়াত ও অমুসলিমদের অনুষ্ঠানে যোগদান প্রসঙ্গে। ১। আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবি। আমাদের অফিসে ইফতার মাহফিল হলে অমুসলিম চাকুরীজীবিরাও তাতে অংশগ্রহণ করেন। এখন আমার কি এতে অংশগ্রহণ করা উচিত? না করলে অসামাজিক বা অফিসের কর্তাদের রোষে পড়তে হতে পারে। আমার কি করনীয়? ২। আমাকে কোন ইফতার মাহ্ফিলে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। সেখানে অমুসলিম ব্যক্তিকেও দাওয়াত দেয়া হয়েছে আমি জানার পর আমি কি তাতে অংশগ্রহণ করবো? ৩। ইফতার মাহফিলের আয়োজন করলে তাতে অনেকেই অর্থ সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসে। যদি আমি নিশ্চত না থাকি তার উৎস হালাল উপার্জনের কি না তখন কি তা নেয়া উচিত হবে। কেউ দান করলে কি তার উৎস জিজ্ঞাসা করা যাবে? দয়া করে শরীঈ উত্তর প্রদানে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের আরো ইসলামের খেদমত করার তাওফিক দান করুন। আমিন মোঃ আতিকুর রহমান সরকারী চাকুরীজীবি কিশোরগঞ্জ থেকে

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

১ ও ২ নং এর উত্তর অমুসলিমদের সাথে আন্তরিক মোহাব্বত রাখা জায়েজ নয়। বিশেষ করে এমন অমুসলিমের সাথে যার দ্বারা নিজের দ্বীনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে এর মানে এই নয় যে, তাদের সাথে স্বাভাবিক সামাজিক আচরণ ভাল করবে না। বা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে বেড়াবে। বরং বিধর্মী ব্যক্তি যদি প্রতিবেশি হয়, তাহলে প্রতিবেশির হক তার জন্যও প্রযোজ্য হবে। সুতরাং বিধর্মী ব্যক্তি উপস্থিত থাকলেই কোন অনুষ্ঠানে যোগদান অবৈধ হয়ে যাবে না। তবে যদি উক্ত অনুষ্ঠান এমন হয়, সেখানে গেলে নিজের ঈমান আমলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সেটি মুসলিমদের অনুষ্ঠান হলেও যাওয়া জায়েজ নয়। এ হিসেবে আপনি নির্দিষ্ট করে নিতে পারবেন, উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদানের ব্যাপারে কী হুকুম হবে? يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (٥:٥١ হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। -সূরা মায়েদা-৫১ তবে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, বিপদে সহযোগিতা করা, প্রতিবেশী হলে খোঁজ খবর নেয়া ইত্যাদি শুধু জায়েজই নয়। উত্তম। إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَىٰ إِخْرَاجِكُمْ أَنْ تَوَلَّوْهُمْ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (٦٠:٩) আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। -সূরা মুমতাহিনা-৮ এক ইহুদী কিশোর নবী c -এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী c তাকে দেখতে গেলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩৫৬, ৫৬৫৭ ৩ নং এর জবাব কোন মুসলিমের উপার্জনের ক্ষেত্রে অযথা সন্দেহ করা উচিত নয়। বরং সেটিকে হালাল উপার্জন মনে করাই উচিত। জিজ্ঞাসার করারও প্রয়োজন নেই। মুসলমানদের প্রতি সুধারণা রাখাই ইসলামের শিক্ষা। তবে যদি সুনিশ্চিতভাবে জানা থাকে, লোকটি হারাম উপার্জন করছে। তাহলে এক্ষেত্রে তার সহযোগিতা বা হাদিয়া নেয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা আছে। হারাম উপার্জনকারী এবং হারাম ও হালালের মাঝে সংমিশ্রিত উপর্জনকারীর হাদিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি সূরত হতে পারে। যথা- ১ হারাম উপার্জনকারীর পূর্ণ রোজগারই হারাম। আর লোকটি তার হারাম টাকা দিয়েই হাদিয়া দিচ্ছে। ২ লোকটির উপার্জন হালাল ও হারামের মাঝে সংমিশ্রিত। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়। তবে এর মাঝে হারাম উপার্জন বেশি। আর লোকটি মিশ্রিত সে সম্পদ দিয়ে হাদিয়া দিচ্ছে। ৩ দাওয়াতকারীর হালাল উপার্জনও আছে, আবার হারাম উপার্জনও আছে। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়। তবে তার হারাম উপার্জন কম। হালাল উপার্জন বেশি। আর লোকটি এ মিশ্রিত সম্পদ দিয়ে হাদিয়া দিচ্ছে। ৪ হারাম উপার্জনকারী হারাম উপার্জন দিয়ে হাদিয়া দিচ্ছে না। বরং কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে হাদিয়া দিচ্ছে। প্রথমোক্ত দুই সূরতে উক্ত ব্যক্তির টাকা নেয়া জায়েজ নয়। আর তৃতীয় সুরতে উক্ত ব্যক্তির টাকা নেয়া জায়েজ হলেও না নেয়া উত্তম। আর চতুর্থ সুরতে উক্ত ব্যক্তির টাকা নেয়া জায়েজ আছে। فى الفتاوى الهندية– أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ জানু, ২২