ইন্স্যুরেন্স বা বিমা হালাল কিনা

মাসিক আল কাউসারব্যাংক-বিমা৪ জানু, ২১

প্রশ্ন

আমি একটি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট। আমি এখানে মানুষকে দিয়ে ডিপিএস করাই। কোম্পানি তা থেকে আমাকে কিছু কমিশন দেয়। আমার জানার বিষয় হল, এখান থেকে যে টাকা পাই তা কি হালাল হবে? আর যদি হালাল না হয়, তাহলে আমি কি এই টাকা মসজিদ-মাদরাসা বা অন্যান্য সেবামূলক কাজে খরচ করতে পারব? আমি কি চাকরিটা চালিয়ে যা পাই তা যদি এইভাবে ব্যয় করি, তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে কি আমি দায়মুক্ত থাকব। আর যাদেরকে দিয়ে ডিপিএস করাই তাদের কাছে কি দায়ী থাকব? কেননা ডিপিএস করার এক বছরের ভিতরে ভাঙলে ডিপিএসকারী কোনো টাকাই পাবে না। এমনকি এক বছর পরে ভাঙলেও ডিপিএসকারীর কিছু লস হয়। যদিও আমি গ্রাহকদেরকে এই বিষয়গুলো জানিয়ে ডিপিএস করিয়ে থাকি।

মুফতী সাহেবকে আর একটু জানিয়ে রাখি, আমি আমার এলাকার এক আলেম থেকে জানতে পারি যে, আমাদের দেশের প্রায় সব ব্যাংক-বীমার কার্যক্রম হারামের ভিতরে পরে। তারপর আমি আমার ম্যানেজারকে বলি যে, স্যার এই চাকরি করা তো শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তখন সে আমাকে ড. জাকির নায়েকের একটি ভিডিও দেখায়; সেখানে তিনি বলেন, ইন্সুরেন্স করা যাবে না- এরকম কথা কুরআনের কোথাও লেখা নেই। তবে তিনি বলেছেন, যেখানে সুদ আছে সেখানে কখনোই মুমিন যেতে পারে না।

তাই মুফতী সাহেবের কাছে আমার আকুল আবেদন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর শরীয়তের দলীল দ্বারা দিলে আমি অনেক উপকৃত হব এবং হারাম থেকে বাঁচতে পারব।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

লাইফ ইন্সুরেন্সে শরীয়ত নিষিদ্ধ রিবা, কিমার ও আলগারার সবই বিদ্যমান। আর এসবকিছুই ইসলামে হারাম। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়ার মানে হল হারাম ও জঘন্যতম গুনাহের কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ • তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর, পাপ কাজে ও জুলুমে একে অপরকে সাহায্য করো না। -সূরা মায়েদা, আয়াত ৩

সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য এ ধরনের কোম্পানিতে চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়া জায়েয নয়। এখান থেকে যে কমিশন বা বেতন দেওয়া হয় তা-ও বৈধ নয়। এটাকা গ্রহণ করে ফেললে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদের দিয়ে দিতে হবে।

আপনার মাধ্যমে যারা ডিপিএস করেছেন, তাদেরকে যদি আপনি কোম্পানির নিয়ম-নীতি সম্পর্কে ভুল কোনো তথ্য না দিয়ে থাকেন, তাহলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়ভার আপনার উপর আসবে না।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • সহীহ মুসলিম, পৃষ্ঠা: ১,৫৯৮
  • মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, পৃষ্ঠা: ২৩,৫৯৩
  • তাবয়ীনুল হাকায়েক, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৬০
  • বাযলুল মাজহুদ, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৪৮

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৪ জানু, ২১