আমি কাকে ছেড়ে থাকব আমার মা বাবাকে নাকি আমার স্ত্রী কে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবাহ-তালাক২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

গত একবছ পূ ্বে আমি একটি মেয়েকে পছন্দ ক ে তা িবা কিছু লোকে উপস্থিতিতে বিবাহ ক ি। কিন্তু আমা িবা কেহ জানতনা। আম া স্বামী স্ত্ ী দেখা ক েছি এবং এক সাথে থেকেছি। এখন আমা মা বাবা জানতে পে েছেন যে, আমি পালিয়ে বা তাদে না জানিয়ে বিবাহ ক েছি। তাই তা া এই বিবাহ মেনে নিতে পা ছেন না। তা া আমাকে স্ েফ বলে দিয়েছেন যে, আমি আমা স্ত্ ী কে াখতে পা বনা আ াখলে তাদে কে ছে ে দিতে হবে। এ পিছনে কিছু কা ন হচ্ছে, আমা বাবা একজন ইসলামিক মাইন্ডে লোক এবং সমাজে তা ভাল সুনাম য়েছে। তিনি চাননা তা এই সুনাম নষ্ট হোক। তাই এমনটি ক ছেন। তাদে মানসিক অবস্থা দেখে আমিও তাদে পক্ষেই চলে গেছি। আমি আমা স্ত্ সাথে কথা বলিনা। আমা িবা চাচ্ছে আমা স্ত্ ী কে অনেকটা চাপ দিয়ে আমাকে ডিভো ্স দিতে। কিন্তু আমা িবা মোহ ানা টাকা দিতে াজি নয়। এ িব ্তে কিছু খ চ বাবাদ অতি নগণ্য একটি প িমাণ টাকা দিতে চাচ্ছে। আমি আমা িবা পক্ষে থাকলেও খানিক ভাল আবা খানিক মন্দ থাকি। আমি আসলে বুঝতে পা ছি না। আমি কাকে ছেড়ে থাকব? আমা মা বাবাকে নাকি আমা স্ত্ ী কে? আমাকে কু আন ও সহিহ হাদিস দ্বা া সমাধান দিবেন। আ ও কোন কিছু জানা থাকলে আমাকে িপ্লে ক লে আমি জানিয়েদিব। আল্লাহ্ হাফেজ।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

বিয়ে শাদী বাচ্চাদের কোন ঘরবাড়ি বানানোর খেলা নয় যে, ইচ্ছে হলেই যতেœর সাথে বানানো হবে, আবার ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে। বিয়ে শুধুই জৈবিক চাহিদা পূরণ নয় এটি একটি ইবাদতও বটে। বিয়ে সম্পর্কে যেমন আল্লাহ তাআলা কর্তৃক রয়েছে নির্দেশনা, তেমনি রাসূল c থেকে রয়েছে এর কার্যকরী পদ্ধতির বর্ণনা। ইচ্ছেমত যেভাবে ইচ্ছে, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করার মানসিকতা বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কটিকেই কলুষিত করার নামান্তর।শুধু শারিরিক চাহিদা পূরণের হীন লালসায় যারা বিয়ে করে থাকেন, তাদের কাছে বিয়ে একটি আনন্দ উপভোগের বস্তু হলেও ইসলামী শরীয়তে বিয়ের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। এর মাধ্যমে ছেলে ও মেয়ের চরিত্র ও ও সম্মান যেমন নিরাপদ হয়। তেমনি পরিবার পরিবারে সৃষ্টি হয় আত্মীয়তার মধুর সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় একটি অনন্য শালিন ও সুন্দর নজির উপস্থাপিত হয়। মানুষ যে অন্য সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ তাও প্রতিভাত হয়ে উঠে বিয়ের অনুপম বন্ধনের দ্বারা। কারণ মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণীর মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু সবার মাঝেই জৈবিক চাহিদা পূরণের মানসিকতা আছে। বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা আর নোংরামী থেকে মুক্ত থাকতে ইসলামী শরীয়তে জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বিয়েকে করেছে অলঙ্ঘণীয় বিধি। সেই সাথে মোহর, বাসস্থান, খোরপোষ ইত্যাদি আবশ্যক করে দিয়ে বিয়েকে করেছে একটি অর্থবহ সম্পর্কের মাধ্যম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, সুন্দর ও শালীন এ মধুর সম্পর্ককে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কতিপয় ভাইয়েরা খেল-তামাশার বস্তু বানিয়ে নিয়েছে। বিয়ে করতে যেমন কোন বাইন্ডিং নেই, তেমনি তালাক দেয়ার জন্যও কোন চিন্তা-ফিকির বা ধর্মীয় বিষয়ের লেহাজ নেই। এ যেন ছেলে খেলা। ইচ্ছে হলেই গড়ে দিল। ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে দিল। এরকম ছেলেমানুষী করা থেকে সকলকেই বেঁচে থাকতে হবে। বিয়ে করার সময় যেমন ইসলামী শরীয়তকে সামনে রেখে চিন্তা ফিকির করে, পরিবারের সাথে আলাপ করে, মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে করা উচিত। তেমনি তালাক দেয়ার ক্ষেত্রেও দ্বীনকে সামনে রেখে চিন্তা ফিকির করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মনে চাইতেই হুট করে বিয়ে করে ফেলা যেমন বোকামী, তেমনি হুট করে তালাক দিয়ে ফেলাটাও আহমকী। পিতা-মাতার রক্ত-ঘামের উপর প্রতিষ্ঠিত আপনার শরীর। তাদের কুরবানীতেই আজ যৌবনদীপ্ত হয়েছে আপনার শরীর। আপনার শরীরের এ শক্তি, যৌবনের এ উন্মাদনা শরীরে সিঞ্চিত করতে আপনার পিতা-মাতাকে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বলাই বাহুল্য। মায়ের অসংখ্য নির্ঘুম রাত, মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও আপনাকে বাঁচানোর আকুতি, পিতার রক্ত পানি করা উপার্জন ধীরে ধীরে আপনাকে যৌবনময় করেছে। আপনাকে দুর্বল থেকে সবলে পরিণত করেছে। কিন্তু বিয়ের মত এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সেই পিতা-মাতার মতামতকে ভুলে গেলেন? পিতা-মাতার অমতে বিয়ে করাটা যেমন অমানবিক ও দোষণীয় কাজ। তার চেয়েও কম দোষণীয় নয়, যে মেয়ে তার পিতা-মাতা, ঘর-বাড়ি সব কিছু ছেড়ে কেবলি আপনার জন্য আপনার কাছে ছুটে এসেছে তাকে নিষ্ঠুরের মত তাড়িয়ে দেয়া। পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া, তাদের অসন্তুষ্টিতে বিয়ে করাটা যেমন ঠিক হয়নি। আর বর্তমানে বিয়ে করা মেয়েকে তালাক দিয়ে দেয়াও হবে অমানবিক ও জুলুম। তাই আপনি আপনি আপনার পিতা-মাতাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন। “আপনার পিতা মাতা বিয়েটা মেনে নিচ্ছে না” শুধু এই কারণে তালাক দেয়া জায়েজ হবে না। أَمَّا بِاعْتِبَارِ أَصْلِ الْجَوَازِ فَلَا يَلْزَمُهُ طَلَاقُ زَوْجَةٍ أَمَرَاهُ بِفِرَاقِهَا، وَإِنْ تَأَذَّيًا بِبَقَائِهَا إِيذَاءً شَدِيدًا؛ لِأَنَّهُ قَدْ يَحْصُلُ لَهُ ضَرَرٌ بِهَا، فَلَا يُكَلَّفَهُ لِأَجْلِهِمَا؛ إِذْ مِنْ شَأْنِ شَفَقَتِهِمَا أَنَّهُمَا لَوْ تَحَقَّقَا ذَلِكَ لَمْ يَأْمُرَاهُ بِهِ فَإِلْزَامُهُمَا لَهُ مَعَ ذَلِكَ حُمْقٌ مِنْهُمَا، وَلَا يُلْتَفَتُ إِلَيْهِ، (مرقاة المفاتيح، باب الكبائر، الفصل الثالث-1/132) وَأَمَّا الطَّلَاقُ فَإِنَّ الْأَصْلَ فِيهِ الْحَظْرُ، بِمَعْنَى أَنَّهُ مَحْظُورٌ إلَّا لِعَارِضٍ يُبِيحُهُ، وَهُوَ مَعْنَى قَوْلِهِمْ الْأَصْلُ فِيهِ الْحَظْرُ وَالْإِبَاحَةُ لِلْحَاجَةِ إلَى الْخَلَاصِ، فَإِذَا كَانَ بِلَا سَبَبٍ أَصْلًا لَمْ يَكُنْ فِيهِ حَاجَةٌ إلَى الْخَلَاصِ بَلْ يَكُونُ حُمْقًا وَسَفَاهَةَ رَأْيٍ وَمُجَرَّدَ كُفْرَانِ النِّعْمَةِ وَإِخْلَاصِ الْإِيذَاءِ بِهَا وَبِأَهْلِهَا وَأَوْلَادِهَا، (رد المحتار، كتاب الطلاق-4/428، منحة الخالق على البحر الرائق-3/413) বিঃদ্রঃ আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস নয়। আমাদের গ্রহণযোগ্য দলীল হল চারটি। যথা- ১-কুরআন। ২-সুন্নাত। ৩-ইজমায়ে উম্মত। ৪-কিয়াসে শরয়ী। ইসলামী শরীয়তের বিধান উক্ত চারটি বিষয় দ্বারাই প্রমাণিত। শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল চাওয়া মানে হল, পরোক্ষভাবে বাকি দুই দলীল তথা ইজমা ও কিয়াসকে দলীল হতে অস্বিকৃতি জানানো। সেই সাথে হাদীসের অসংখ্য প্রকারের মাঝে শুধু এক প্রকার হাদীসকে দলীলযোগ্য বলে অসংখ্য হাদীসকে অস্বিকার করার নামান্তর। কারণ হাদীস শুধু সহীহ নয়। হাসান লিজাতিহী হয়, হাসান লিগাইরিহী হয়, মুরসাল হয় ইত্যাদি ও হাদীস। তাই “কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল চাই” টাইপের বক্তব্য পরিহার করা উচিত।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২