আমরা কোন হানাফী হবো দেওবন্দী না বেরেলবী

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেইসবুকে এক ভাই প্রশ্ন করেছেনঃ “আমি হানাফী হতে চাই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি কোন হানাফী হবো!!!দেওবন্দী হানাফী??? না বেরোলভী হানাফী??? নাকি ইমাম আবুহানীফা রাহিমাহুল্লাহএটার সমাধান দিয়ে যাননি??? নাকি ইমাম সাহেবের নামে বানানো মাযহাব অপূর্ণাঙ্গ??? কেউ আমাকে বলুন ইমাম সাহেব কোন ফেরকাটি মানতে বলেছেন দেওবন্দী না বেরোল্ভী?? কারণএক্ষেত্রে আমি যদি অন্য মাযহাব মানি তাহলে হানাফী মাযহাবের উপর আমল হবে না ফলে একাধিক মাযহাবের উপর আমল করার কারণে আমি তো লা মাযহাবী হয়ে যাবো?” এ বিষয়ে আপনাদের ব্যাখ্যা কাম্য।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আসলে অনেক সময় প্রশ্ন করা হয়, জানার জন্য। আর অনেক সময় অহেতুক প্রশ্ন করা হয় ফিতনা সৃষ্টির জন্য। এ কারণেই অহেতুক প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রতি রাসূল c অনুৎসাহিত করেছেন। হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে- عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، عَنْ أَبِيهِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مِنْ حُسْنِ إِسْلامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ “ হযরত আলী বিন হুসাইন তার পিতা e থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, ইসলামের সৌন্দর্য হল, ব্যক্তি অহেতুক বিষয়কে পরিত্যাগ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৩৭ উল্লেখিত প্রশ্নটিও তেমনি। একটি অহেতুক ফিতনা সৃষ্টিমূলক প্রশ্ন। যার কোন মাকসাদ নেই ফিতনা ছাড়া। ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞতার কারণে এসব মুখরোচক প্রশ্নের দ্বারাও যেহেতু কেউ কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে, তাই এর একটি যৌক্তিক জবাব আমরা তুলে ধরছি। অনেক সময় প্রশ্নের জবাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার দ্বারা প্রশ্নের উত্তর হয়। এর নাম তাহকীকী জবাব। আবার অনেক প্রশ্নের জবাব পাল্টা প্রশ্নের দ্বারা প্রশ্নের জবাব পরিস্কার হয়। ইলযামী জবাব আর বিশেষ করে ফিতনামূলক প্রশ্নের জবাব দিতে হয় পাল্টা প্রশ্ন করে। যেহেতু উপরোল্লিখিত অহেতুক প্রশ্নটি একটি ফিতনামূলক প্রশ্ন। তাই এর জবাব দিতে হবে প্রশ্ন দিয়ে। আমরা উক্ত জাহিল ব্যক্তিকে প্রশ্ন করি- ১ একজন কাফির যদি উক্ত ব্যক্তির কাছে এসে বলে মুসলিম হতে চায়। আর উক্ত ব্যক্তির কাছে এসে বলে- “আমি কি শিয়া মুসলিম হবো না সুন্নি মুসলিম হবো?” এর জবাবে প্রশ্নকারী ব্যক্তি কি জবাব দিবে এবং কেন দিবে? পরিস্কার ভাষায় আমাদের জানান। তাহলে উপরোক্ত প্রশ্নটির জবাবও আমরা জানাবো। ২ একজন মদখোর, জিনাকারী ব্যক্তি যদি প্রশ্নকারী লোকটিকে বলে, “আমি ভাল হয়ে যেতে চাই। কিন্তু কেমন ভাল হবো? মদ আর জিনা ছেড়ে দিয়ে ভাল হবো? নাকি মদ, জিনা ছাড়ার সাথে নামায রোযা পালনকারী ভাল মানুষ হবো?” এ প্রশ্নের জবাবে প্রশ্নকারী কী জবাব দিবে? উল্লেখিত প্রশ্ন দু’টির জবাব যা হবে, সেটির দ্বারাই আমাদের উপর উত্থাপিত অহেতুক প্রশ্নের জবাবটি পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ৩ আপনি তাদের বলুন! আমরা কোন আহলে হাদীস হবো? বাংলাদেশ আহলে হাদীস যুব সংঘের সভাপতি মুযাফফর বিন মহসিন সাহেব অনেক হাহাকার আর মনোকষ্ট নিয়ে গ্রন্থ লিখেছেন “গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে আহলে হাদীস আন্দোলন”।

যা প্রকাশিত হয়েছে আছ ছিরাত প্রকাশনী থেকে।

সেই ছোট্ট পুস্তিকাটির পাতায় তিনি তাদের যে অসংখ্য দল আর বিভক্তির ফিরিস্তি দিয়েছেন তার একটি তালিকা-

জমিয়তে আহলে হাদীস আন্দোলন

আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ।

আহলে হাদীস তাবলীগে ইসলাম। -পৃষ্ঠা-৭

আহলে হাদীস যুব সংঘ। -পৃষ্ঠা-৬

জমিয়তে শুব্বানে আহলে হাদীস। -পৃষ্ঠা-৬

জামাআতে গুরাবায়ে আহলে হাদীস।(পৃষ্ঠা-২০)

অলইন্ডিয়া আহলেহাদীস কনফারেন্স। -পৃষ্ঠা-২০

আঞ্জুমানে আহলে হাদীস বাঙ্গলা ও আসাম। -পৃষ্ঠা-২০

নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদীস। -পৃষ্ঠা-২০ এখন প্রশ্ন হল, কেউ যদি আহলে হাদীস মতাদর্শী হতে চায়, তাহলে সে কোন আহলে হাদীস হবে? তাহকীকী জবাব যদি কেউ সত্যিই লা-মাযহাবের ফিতনা ও বিদআতি মতবাদ ছেড়ে নবীজী c এর বলা শ্রেষ্ট যুগ থেকে আমলী মুতাওয়াতির সূত্রে চলে আসা হানাফী মাযহাব গ্রহণ করে বিজ্ঞ মুজতাহিদের ইজতিহাদকৃত পদ্ধতিতে কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণ করতে চায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক পরমর্শ হল, তিনি প্রথমে নিজের মাথা থেকে জাহিল হয়েও মুজতাহিদের ভাব নেয়ার বিষয়টিকে দূরিভূত করবেন। তারপর হানাফী মাযহাব অনুপাতে কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণ করবেন। কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক হানাফী মাযহাবের যেসব কিতাব সংকলিত হয়েছে, তাতে যেসব বিষয়কে পাবেন, তা মানবেন। আর যা নেই বা যেগুলোকে বিদআত বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা বিদআত হিসেবে পরিত্যাগ করে দিবেন। বেরেলবী বা দেওবন্দী হানাফী হওয়ার দরকার নেই। তিনি শুধুমাত্র হানাফী হয়ে যান। তারপর হানাফী গ্রহণযোগ্য কিতাবের আলোকে নিজের জীবনকে সুন্দর করে নিন। বিদআতমুক্ত করে নিন। ব্যস তাহলেই তার সামনে সত্য প্রতিভাত হয়ে যাবে। বেরেলবী বা দেওবন্দী হানাফী মাযহাবের কোন শাখা নয়। যেমন শিয়া বা সুন্নি ইসলামের কোন শাখা নয়। বরং ইসলাম মান্যকারীদের মাঝে দু’টি গ্রুপ হয়ে গেছে। একদল জাহান্নাফী ফিরক্বা শিয়াদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কেউবা সঠিক অবস্থানে থেকে সুন্নি রয়েছে। এ বিভক্তি ইসলামের বিভক্তি নয়। বরং মান্যকারীদের বিভক্তি। তাই কাউকে ইসলামের দিকে আহবান করার সময় মান্যকারীদের মতভেদের আহবান করা হয় না। বরং মূল ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। যখন একজন ব্যক্তি সত্যিকার মুসলিম হয়ে যাবে। তখন সে নিজেই বুঝে নিবে শিয়ারা সঠিক না সুন্নিরা সঠিক। তেমনি হানাফী মাযহাব মান্যকারীদের মাঝে উপমহাদেশে দুই গ্রুপ হয়ে গেছে। একদল হল বিদআতি বেরেলবী গ্রুপ। আরেক দল হলেন খাটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী উলামায়ে দেওবন্দের জামাত। এখন যদি কেউ হানাফী হতে চায়, আমরা তাকে প্রথমেই বেরেলবী বা দেওবন্দী হওয়ার কথা বলবো না। বরং তাকে আগে বলবো, আপনি আগে নিজেকে ফিতনাবাজের কাতার থেকে নাম কাটান। প্রথমে জাহিল হয়ে মুজতাহিদ সাজার ভন্ডামী করার খাতা থেকে নিজের নামটি কাটান। তারপর হানাফী ফিক্বহ অনুসারে কুরআন ও সুন্নাহের উপর আমল করুন। কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক হানাফী ফিক্বহের কিতাবে যেসব কাজকে বিদআত বলা হয়, তা পরিত্যাগ করে দিন। মুসলিম হতে গিয়ে শিয়া সুন্নির বিষয় উত্থাপন করে মুসলিম হতে নিজেকে দূরে রাখা যেমন ভন্ডামী। তেমনি জিনা, মদ ছাড়তে গিয়ে মদ-জিনা ছেড়ে ভাল হবে না ইবাদতগুজার ভাল হবে এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে ভাল হতে না চাওয়াও যেমন ভন্ডামী। ঠিক তেমনি দেওবন্দী -বেরেলবীর ধুয়া তুলে ধোঁকা আর প্রতারণামূলক মতবাদ লা-মাযহাবী থেকে হানাফী না হতে চাওয়াও ভন্ডামী। আল্লাহ তাআলা এসব ফিতনাবাজদের হাত থেকে সাধারণ মুসলিমদের হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২