অমুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া ব্যক্তি যার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি সে কেন জাহান্নামী হবে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা১৩ মে, ২১

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি হিন্দু বা অন্য কোন ধর্মে জন্ম নিয়েছে এবং তার কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছলনা সে কেন জাহান্নামী হবে? তার দোষ কি? কারণ বড়দের যা করতে সে তাই করেছে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

কোন ব্যক্তিই অন্য কোন ধর্মে জন্মগ্রহণ করে না। বরং প্রতিটি মানুষই ইসলাম ধর্মের উপরই জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তার বাবা, মা ও পরিবার, সমাজ ইত্যাদির দেখাদেখি বিভিন্ন ধর্মে অভ্যস্ত হয়।

খৃষ্টান ঘরে জন্ম নেয়া মুসলিম শিশু পরিবারের দেখাদেখি খৃষ্টান হয়। ইহুদীর সন্তান ইহুদী আর হিন্দুর সন্তান হিন্দু হয়। কিন্তু তার জন্ম উক্ত ধর্মগুলোতে হয়নি। হয়েছে মুসলিম হিসেবেই।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ • হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। -বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৫

এখন প্রশ্ন হল, সে তার পরিবারের দেখাদেখি উক্ত ধর্মগুলো অনুসরণ করে মৃত্যুবরণ করল। ইসলাম সে মানেনি। তাহলে সে শাস্তি পাবে কেন? এর উত্তরের আগে আপনার প্রশ্নটির এ অংশ ‘তার কাছে ইসলাম পৌঁছেনি’ কথাটির উপর আমাদের আপত্তি রয়েছে। কারণ, এটি সঠিক নয় যে, বর্তমানে কারো কাছে ইসলাম পৌঁছেনি। কারণ, সারা বিশ্বেই ইসলাম পৌঁছে গেছে। শুধুমাত্র নিজের বিবেক বুদ্ধি ও মেধা খাঁটিয়ে শুধু বুঝে নেয়া বাকি।

কুরআন পৃথিবীর সকল প্রান্তেই পাওয়া যায়। সুতরাং ব্যক্তির বোধবুদ্ধি হবার পর সত্য অনুসন্ধান করা তার দায়িত্ব। প্রতিটি ব্যক্তিই যদি তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেক কাজে লাগিয়ে অন্যান্য ধর্মের মাঝে ইসলামের স্বতন্ত্র ও সঠিক হবার বিষয়ে যাচাই করে, তাহলে সে ইসলাম গ্রহণে অবশ্যই বাধ্য হবে। যেমনটি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণ যুগে যুগে করেছেন।

আবার মুসলমান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও অনেকে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় বা ইসলাম পুরাপুরি অনুসরণ করে না। এর কারণ এটাই যে, সে সত্য গ্রহণে পিছিয়ে পড়েছে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেনঃ سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ ۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ • এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? -সূরা হাম মিম সাজদা-৫৩

ইসলাম সত্য ধর্ম। এটা প্রতিটি মানুষের সামনেই কখনো না কখনো প্রকাশিত হয়ই। কিন্তু গুরুত্ব না দেবার কারণে, কিংবা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে তা মানতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ কারণেই যারা কাফের অবস্থায় জাহান্নামে যাবে, তারা হাশরের ময়দানে তাদের কাছে ইসলামের কোন নিদর্শন প্রকাশিত হয়নি এ দাবী করতে পারবে না। বরং তারা তখন বলবে যে, وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُءُوسِهِمْ عِندَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ • যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি। -সূরা সাজদা-১২

কারণ, তাদের কাছে ইসলামের নিদর্শন পৌঁছেছিল, কিন্তু তারা তা মানেনি। এখন মানবে বলে আবার দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে। এবার মানবে বলে ওয়াদা করবে। কিন্তু তাদের সেই আবেদন অসময়ে হওয়া মানা হবে না। কারণ, সময় থাকতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে সত্যপথ অনুসরণ করেনি।

দুনিয়া সকলের জন্য পরিক্ষাকেন্দ্র! الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ • যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। -সূরা মুলুক-২ অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা যেমন পরীক্ষা। তেমনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করাও পরীক্ষা। মুসলমানরাও নানাভিদ দুঃখ কষ্ট, হতাশায় ঈমানের পরীক্ষায় পরীক্ষায় নিপতিত হয়। আবার অমুসলিমরাও নানাভিদ পরীক্ষা পতিত হয়। এর মাঝে অমুসলিম পিতা মাতার ঘরে জন্ম নেয়াটাও তার জন্য পরীক্ষা। সেইসব পরীক্ষায় যারা যথার্থ উত্তীর্ণ হতে পারবে, তারাই হবে সফলকাম। আল্লাহর দেয়া, জ্ঞান, বিবেক বুদ্ধি ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি ও কুরআন রিসার্চ করে সত্য পথ অনুসরণ না করার কারণে ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই তার কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি হবে। আর যারা সত্য পথ দেখে তা অনুসরণ করবে, তারা হবে আখেরাতে সফলকাম।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৩ মে, ২১