অমুসলিম এনজিওদের বিরোধিতার কারণ

ইসলামী জিন্দেগীসভ্যতা ও সংস্কৃতি২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

উলামায়ে কিরামগণ অমুসলিম এনজিও সমূহের বিরোধিতা করেন কেন? এনজিওদের ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আমাদের দেশে অমুসলিম এনজিও বলতে মূলতঃ ইয়াহুদী ও খৃষ্টান ‍দেশসমূহের অর্থে পরিচালিত এনজিও সমূহই বুঝায় । আর কুরআন-হাদীসের আলোকে এবং ইসলামের আবির্ভাবের পর হতে এ পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলমানদের সংঙ্গে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের আচরণের ইতিহাসের ‍দিকে তাকালে এটা দিবালোকের চেয়ে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা কখনো মুসলমানদের মঙ্গল কামনা করে নাই এবং কস্মিনকালেও তারা মুসলমানদের হিতাকাঙ্খী হতে পারে না । তাই কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না । তারা একে অপরের বন্ধু । -সূরা মায়িদাহ আয়াতঃ ৫১

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেঃ তোমরা মু’মিনদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না ; তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ত্রুটি করে না । তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ । শত্রুতা প্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরোয় । আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো বেশী জঘন্য । তোমাদের জন্য ‍নিদর্শন ‍বিষদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হল । যাতে তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও । দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস । কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না । আর তোমরা সমস্ত ‍কিতাবেই বিশ্বাসী । অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে- আমরা ঈমান এনেছি । পক্ষান্তরে তারা যখন তোমাদের হতে পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের উপর রোষ বশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে । বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক । আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন । তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়, তাহলে তাদের খারাপ লাগে । আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না । নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্বে আছে । -সূরা আল-ইমরান ১১৮-১২০

আরেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা সতর্কবাণী উচ্চারণ পূর্বক ইরশাদ করেনঃ ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা কখনই আপনার (তথা মুসলমানদের) প্রতি সন্তুষ্ট হবে না । যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন । যদি আপনি (তথা মুসলমানরা) তাদের আকাঙ্খা সমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার (তথা মুসলমানদের) উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই । -সূরা বাকারাহঃ ১২০

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট বলেছেনঃ তারা (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা) বলে- তোমরা ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে । -সূরা বাকারাহঃ ১৩৫

আল্লাহ তা‘আলার এ সকল চিরসত্য বাণীসমুহের প্রতি করো দৃঢ় বিশ্বাস বা আস্থার অভাব থাকলে আমরা তাদের আহবান জানাই -আপনারা ইসলামের প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বত্সরের ইতিহাসে এমন কোন নযীর পেশ করুন যদ্বারা বুঝা যায় তারা যে, স্বার্থ ছাড়া মুসলমানদের কোন কল্যাণ কামনা করছে । আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি এমন দৃষ্টান্ত কেউ কখনো পেশ করতে পারবে না ।

বর্তমানে আমাদের এই ইসলামী ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশে এনজিওদের নানা রকম প্রকাশ্য চরম অশালীন অপকর্মসমূহ ছাড়াও সেবার নামে রোগীদেরকে ফ্রি ঔষধ প্রদান, শিশুদের বিনা বেতনে শিক্ষা ও শিক্ষা সামগ্র্র্র্রী প্রদান, গরীবদেরকে ঋণ প্রদান ইত্যাদি কর্মসূচীসমূহ পরিচালনায় তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মূর্খ ও ধর্ম জ্ঞান শূন্য মুসলমান ও তাদের সন্তানদের মাঝে খৃষ্টীয় ভাবধারা সৃষ্টি করা । খৃষ্টীয় ধর্ম প্রচার করে মুসলমানদের খৃষ্টান বানানো,গরীব জনগণের মাঝে স্থায়ী ভাবে দারিদ্র্য লালন করা । আর দেশের উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের সাহায্য করে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আমাদের দেশের প্রচুর সম্ভাবনাময় উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের সকল খাত ও পথ রুদ্ধ করে রাখা । বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে বিদেশী তথা ইংরেজদের সাহায্য নির্ভর রেখে এদেশের সরকারের উপর নযরদারী ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে খবরদারীর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন শাসকবর্গকে চিরতরে নিজেদের আজ্ঞাবহ রেখে, তাদের মাধ্যমে শতকরা ৯০% মুসলমানের ‍দেশে পশ্চিমা ও খৃষ্টীয় কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়ে মুসলমানদেরকে সেগুলোর অন্ধ অনুকরণে মোহিত করে রেখে এদেশের মুসলিম সমাজ হতে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে চিরতরে দূরে সরিয়ে রাখা । যাতে মুসলমানরা কখনই তাদের ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হতে না পারে এবং দেশে ইসলামী হুকুমাত কায়িমের কোন পরিবেশ বা সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে না পারে । এতে করে মুসলমানরা চিরতরে ঘুনে ধরা কাষ্ঠের ন্যায় দুর্বল হয়ে থাকবে এবং তাদের গোলামীর জিঞ্জিরে চিরকাল আবদ্ধ থাকবে ।

তাই তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় বাহ্যিক কিছু উপকার দেখে নিজেদের চিরস্থায়ী বিপদের মুখে না ফেলে এবং স্থায়ীভাবে পরনির্ভরশীল না থেকে দেশের সম্পদ দিয়েই সম্ভব পরিমাণ স্বনির্ভরতা অর্জন করার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবে ।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১