অফিসের জিনিসপত্র ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১২ জানু, ২২

প্রশ্ন

আমি একটি সরকারি অফিসে চাকুরি করি। আমি অফিসে ব্যবহারের জন্য কাগজ, কলম, সাবান, টয়লেট পেপার ইত্যাদি পাই। প্রশ্নসমূহ : ১.এগুলো ব্যবহার করার ইসলামিক বিধি-বিধান কি? ২. আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার প্রাপ্য জিনিস থেকে আমাকে কাগজ,কলম,সাবান,টয়লেট পেপার ইত্যাদি ব্যবহার করতে দেন। তা কি আমি অফিসে ও অফিসের বাহিরে ব্যবহার করতে পারবো? আর যদি ব্যবহার করে থাকি সেক্ষেত্রে ইসলামিক বিধি-বিধান এর আলোকে আমার কি করণীয়? ৩.বিভিন্ন সময়ে নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অফিসের বাহিরেও কাগজ,কলম,সাবান,টয়লেট পেপার ইত্যাদি ব্যবহার করা কি জায়েজ হবে? ৪.যদি জায়েজ না হয় তবে এক্ষেত্রে আগে যে ব্যবহার করেছি তাতে কি আমার গুনাহ হবে? ৫.গুনাহ হলে এর জন্য ইসলামিক বিধি-বিধান এর আলোকে আমার কি করণীয়?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

অফিস কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত জিনিসপত্র অফিসে ব্যবহার করা জায়েজ। সেই সাথে অফিসিয়াল কাজের জন্য বাহিরেও ব্যবহার করা জায়েজ। তবে অফিসের বাইরে অফিসিয়াল কাজে মগ্ন না হয়ে থাকলে ওসব জিনিস পত্র ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। আর আপনার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে যদি জিনিস পত্র ব্যবহার করার জন্য অফিস কর্তৃপক্ষ বস্তুগুলোর মালিক বানিয়ে আলাদা করে দেয়, তাহলে সেসব বস্তু আপনাকে তিনি দিলে তা ব্যবহার করা আপনার জন্য জায়েজ। কিন্তু যদি তা কেবল প্রয়োজন মাফিক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়, আলাদা করে মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে উক্ত বস্তু আপনাকে আপনার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দিলেও তা আপনার জন্য ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। কারণ তিনি নিজেই তা প্রয়োজন অতিরিক্ত ব্যবহারের মালিক নয়। তাই তিনি এ অধিকার অন্যকেও দিতে পারেন না। -ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-২৭/২৬৭ উদাহরণতঃ প্রতি মাসে অফিসে অফিসারদের একটি করে টয়লেট পেপার, একটি কলম দেয়া হয়। মাস শেষ হয়ে গেলে উক্ত কলম ও টয়লেট পেপার শেষ হল কি না? তা না দেখে অফিস কর্তৃপক্ষ আরেকটি কলম ও টয়লেট পেপার প্রদান করে থাকে। তাহলে বুঝতে হবে কর্তৃপক্ষ বস্তুটির মালিক বানিয়ে দিচ্ছে। পক্ষান্তরে যদি কলম বা টয়লেট পেপার শেষ হলেই কেবল পরবর্তীতে আবার তা প্রদান করে থাকে কর্তৃপক্ষ, মাস শেষ হলেই প্রদান করে না। তাহলে বুঝা যায় যে, বস্তুটির মালিক নয়, বরং ভোগাধিকার দেয়া হয়েছে। তাই এটি অফিসিয়াল কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। সাথে সাথে নিজে ছাড়া অন্য কাউকে তা দেয়াও জায়েজ হবে না। না জেনে অফিসের বস্তু নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহারের কারণে গোনাহ হয়েছে। এক্ষেত্রে এ থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি হল, কর্তৃপক্ষের কাছে এর জন্য ক্ষমা চেয়ে অনুমতি নিয়ে নেয়া বা উক্ত বস্তুগুগুলো ফেরত দিয়ে দেয়া। ভবিষ্যতে এমনটি না করার দৃঢ় সংকল্প করা। أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الصلح جائز بين المسلمين إلا صلحا حرم حلالا أو أحل حراما والمسلمون على شروطهم إلا شرطا حرم حلالا أو حل حراما রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানদের পরস্পর চুক্তি করা জায়েজ আছে। তবে ঐ চুক্তি জায়েজ নয়, যা হালালকে হারাম করে, অথবা হারামকে হালাল করে, মুসলমানরা তাদের শর্তের উপর অটল থাকবে, হালালকে হারামকারী অথবা হারামকে হালালকারী শর্ত ছাড়া। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৩৫২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৬, সুনানে দারা কুতনী,হাদীস নং-৯৬ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ (29 হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরের সম্পদকে অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। তবে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পারস্পরিক সন্তুষ্টচিত্তে হলে ভিন্ন কথা। -সূরা নিসা-২৯ قال العارية مؤداة والمنحة مردودة والدين مقضى والزعيم غارم আবু উমামা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ ধার হিসেবে যা গ্রহণ করা হয়,তা পরিশোদ করতে হবে। দুগ্ধবতী পশুর দুধ পান করা শেষ হলে তা ফেরত দিতে হবে। দেনা থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। এবং কেউ যদি কোন জিনিসের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তবে তাকে দায়িত্বশীল হতে হবে। -সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং-৩৫৬৭, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২১২০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২২৯২ فى البيضاوى- والمالك هو المتصرف فى الأعيان المملوكة كيف شاء الخ (تفسير بيضاوى، سورة الفاتحة- 1/7 বস্তুর মালিক বস্তুতে যেভাবে ইচ্ছে হস্তক্ষেপ করেতে পারে। -তাফসীরে বায়যাবী-১/৭

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ জানু, ২২